পাকিস্তানের জাতীয় কবি আল্লামা ইকবাল তার বাবাকে কথা দিয়েছিলেন তিনি কবিতা লেখার বিনিময়ে কোন অর্থ নিবেন না। সব কথা রাখা যায় না, একসময় টাকার অভাবে কবিতা দিয়েই জীবন নির্বাহ করতে হলো তাকে। কবিতার জন্য পেয়েছিলেন বৃটিশ সরকারের দেয়া নাইট উপাধি। বৃটিশদের নাইট উপাধি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও পেয়েছিলেন, যদিও পরে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এই নাইট উপাধি ত্যাগ করেন। তবে এই দুজনের মিলও আছে। মিলটা কবিতা দিয়ে রাষ্ট্রে প্রভাব ফেলায়।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা দেশভাগের পর ভারতের জাতীয় সংগীত হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতা লাইন থেকে এসেছে। শ্রী লংকার জাতীয় সংগীতের সুরও কবি রবীন্দ্রনাথের লেখা গান থেকে নেয়া হয়েছে। তবে এক জায়গায় আল্লামা ইকবাল এগিয়ে, সেটা হলো তার কবি স্বত্তার থেকে বেরিয়ে এসে একটা রাষ্ট্রের দাবি করে বসেছিলেন। আরও মজার ব্যাপার হলো তার দ্বারা দুটি রাষ্ট্র ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল, একটা ইরান এবং আরেকটা পাকিস্তান।
শিয়ালকোটের ছেলে ইকবাল লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি ও জার্মানী থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে ১৯০৯ সালে তার তৎকালীন দেশ বৃটিশ ভারতে ফিরে এসে আইন ব্যবসা শুরু করে ব্যর্থ হন। তারপর সাহিত্য চর্চায় জড়িয়ে পড়েন, সাফল্যও পান তবে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েন ভালোভাবে। ইকবালের লেখা জুড়ে থাকতো ইসলামী পুনর্জাগরণের গল্প। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের চিন্তানায়ক ড. আলী শরিয়তী এক সময় সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত ছিলেন। ইরানে আবার ইকবাল তার ফার্সি লেখার জন্য বিখ্যাত ছিলেন, আর তিনি ইরানে ইকবাল-ই-লাহোরী নামে পরিচিত ছিলেন। ইরানের শিয়া জনগোষ্ঠীতে তার জনপ্রিয়তা ছিলো।
ইকবালের লেখার দ্বারা খুব প্রভাবিত আরও দুজন মানুষ ছিলেন। একজন পাকিস্তানের কায়েদ-ই-আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আরেকজনের নাম এই লেখার শেষে বলছি। মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন জন্মগতভাবে গুজরাটি। বাবা-মা শিয়া মতাদর্শে বিশ্বাসী। জিন্নাহ্ নিজেকে শুধু মুসলমান দাবি করতেন, যদিও তিনি ধার্মিক ছিলেন না। তার চলাফেরায় ছিলো পাশ্চাত্যের প্রভাব। সাধারণ ভারতীয়দের থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে পরতেন কারাকুল টুপি, যা এখন জিন্নাহ্ টুপি নামে জনপ্রিয়। প্রথমদিকে জিন্নাহ ছিলেন মুসলিম লীগের মধ্যপন্থী নেতা, হিন্দু-মুসলিম ভাতৃত্ববোধ বজায় রেখে স্বাধীন ভারতই ছিলো তার ম্যান্ডেট। ১৯৩০ সালে মুসলিম লীগের অধিবেশনে আল্লামা ইকবাল প্রথম মুসলমানদের নিয়ে সর্বপ্রথম রাষ্ট্র করার প্রস্তাব উপস্থাপন করে। মোটকথা পাকিস্তানের স্বপ্ন তখনই দেখতে শুরু করে। ইসলামী পুর্ণজাগরণের স্বপ্নে বিভোর ইকবালের এই স্বপ্নের পাকিস্তান একসময় বাস্তবে রূপ নেয়, তবে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে থাকেনি, হয়েছিলো ইসলামের সাইনবোর্ড ধরে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতি পাঞ্জাবীদের অত্যাচার-অবিচারের রাষ্ট্র। যাই হোক, সে কথায় পরে আসছি।
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ কংগ্রেসেরও সদস্য ছিলেন একসময়, তখন একসাথে দুটো সংগঠনের সদস্য থাকা যেতো। গান্ধীর সাথে ব্যাক্তিত্বের দ্বন্দ (বিশেষ করে গান্ধীর ভারতীয় পোষাক আর ইংরেজীর পরিবর্তে ভারতীয় ভাষায় কথা বলাকে ধর্মান্ধতা মনে করতেন জিন্নাহ্) আর কংগ্রেসে প্রবল হিন্দুত্ববাদীদের প্রতাপে জিন্নাহ্ একসময় সুবিধা করতে পারলেন না।
কংগ্রেস থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসে কবি ইকবাল আর ইকবালের সমমনাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এক সময় মুসলমানদের নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র করার জোর দাবি বৃটিশদের সামনে তুলে ধরেন। এখানে উল্লেখ্য ইসলামী রাষ্ট্রর দাবি জানালেও জিন্নাহ্ কিন্তু ইসলামিক জীবন-যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন না, বরং তিনি নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে সব জায়গায় উপস্থাপন করতেন। রাজনৈতিক কারণে তার মুসলমানদের নিয়ে আলাদা রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপন করা হলেও তাকে পেয়ে লাভবান হয়েছিল আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের দাবিদার মুসলিম লীগের নেতারা। অন্যদিকে হিন্দু রাষ্ট্রের দাবিদার নেহেরুরাও খুশী হয়েছে, কারণ তাদের দাবিও ছিলো আলাদা হিন্দু রাষ্ট্র। পরবর্তীতে বৃটিশরা এই দুই পক্ষের দাবি মেনে দুটো আলাদা রাষ্ট্র করলেও সম্পূর্ণ ভারতবর্ষকে একটি রাষ্ট্র করে হিন্দু-মুসলিমের সমন্বয়ে অবিভক্ত ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখা মহত্মা গান্ধী সবচে ব্যাথিত হয়েছিলো।
আর এই হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রুপরেখা দেখানো কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের এই নেহরু আর জিন্নাদের রোষানলের পড়ে ঘৃণার বীজ এমনভাবে পড়ে যে লাখ লাখ হিন্দু আর মুসলিম দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে। লাখ লাখ মানুষ ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় নিহত হয়। এদের ঘৃণা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে মুসলিম প্রধান এলাকায় হিন্দুদের দেখামাত্র হত্যা করা হতো আর হিন্দু প্রধান এলাকায় মুসলমানদের দেখামাত্র হত্যা করা হতো। সত্যি বলতে সেই হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ এখনো উত্তরাধিকারীসূত্রে আমাদের এই উপমহাদেশ বহন করে যাচ্ছে। এখনও মুসলিমপ্রধান এলাকায় মুসলিম পরিবারগুলোতে হিন্দুদের ঘৃণা করার রীতি চলছে, হিন্দুপ্রধান এলাকায় হিন্দুদের পরিবারে মুসলমানদের ঘৃণা করার রীতি চলে আসছে।
কবি ইকবালের মতোই শিয়ালকোটের ছেলে ছিলো কুলদীপ নায়ার। প্রথম আলোর কল্যাণে এই দেশেও পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠা কুলদীপ নায়ার মূলত ভারতের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকদের একজন। তৎকালীন বৃটিশ ভারতের শিয়ালকোটে তার বেড়ে ওঠা। দেশভাগের ফলস্বরুপ শতকরা ৬০ ভাগ মুসলিমদের দখলে থাকা শিয়ালকোট ছেড়ে অজানা উদ্দেশ্যে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে এক পারিবারিক বন্ধুর সহায়তায় বর্তমান ভারতের দিকে পালাতে হয় তাকেও। এখনো সুযোগ পেলে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে দেশভাগের ফলে সৃষ্ট হৃদয় ক্ষতের কথা বলে বেড়ান নিজের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হওয়া কুলদীপ নায়ার। অথচ ভারত আর পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্র ঘটনের সময় দুটো রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়া নেহরু আর জিন্নাহ্ দুজনেই বলেছিলেন তাদের দেশে ভিন্ন ধর্মালম্বীরা নিরাপদে থাকবে, ধর্ম ভিন্ন হলেও দেশ সবার একই হবে!
ধর্ম দিয়ে মানচিত্রে কাঁচি চালিয়েও রাজনীতিকদের স্বভাবসুলভ আশ্বাসের মতোই ভারত আর পাকিস্তানের প্রথম দুই রাষ্ট্রনায়ক নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়ে। ভারতের সংবিধান লিখতে দেয় হয় দলিত সম্প্রদায়ের ভীমরাও রামজি আম্বেদকর। পাকিস্তানের জিন্নাহ্ বেচে নিলেন পতাকাকে। পতাকার গাঢ় সবুজ অংশটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রতীক এবং খাড়া সাদা অংশটি পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যলঘুদের প্রতীক। মধ্যভাগে উদীয়মান চাঁদ অগ্রগতির প্রতীক এবং পাঁচ কোনবিশিষ্ট সাদা তারকাটির পাঁচটি কোন হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতীক।
পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরও অনেকদিন নিজস্ব সংবিধান ছিলো না। ছিলো না জাতীয় সংগীতও। নিজেদের ইসলামিক স্টেট হিসেবে অফিসিয়ালি ঘোষণা করে ১৯৫৬ সালে। রাষ্ট্রেকে জিন্নাহ্-র ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ইসলামী স্টেটে ঘোষণার আগে জাতীয় সংগীত নিয়েও ধর্ম-অধর্ম খেলা হয়। দেশভাগের পরপরই মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ লাহোরের হিন্দু কবি জগন্নাথ আজাদকে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত লেখার জন্য বলেন। উদ্দেশ্য, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ দেয়া। জগন্নাথ আজাদের লেখা সংগীত আঠারো মাস জাতীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এর মাঝে জিন্নাহ্-র মৃত্যু হয়। ডানপন্থী শাসকরা জগন্নাথের লেখাকে জাতীয় সংগীত রাখবে। জাতীয় সংগীত কমিটি করে পরে ছয় বছর সময় নিয়ে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ'-কে জাতীয় সংগীত করা হয়।
ধর্মনিরপেক্ষতার চাদর উঠিয়ে দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র হওয়ার আগেই পাকিস্তানজুড়ে অসন্তোষের স্বীকার হতে থাকে রাষ্ট্র। বেশি করে আঘাত আসছিলো পূর্ব পাকিস্তান থেকে। অথচ পাকিস্তান সৃষ্টির মূল কারিগর প্রতিষ্ঠান মুসলিম লীগের সৃষ্টিই পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকাতে। ১৯০৬ সালে।অনেকই হয়তো জানে না, মুসলিম লীগ গঠিত হয় ঢাকার শাহবাগে নবাব সলিমুল্লাহ্-র তত্ত্বাবধানে। তখন নাম ছিলো অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ। আর মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রপুঞ্জ গঠনের প্রস্তাবটা প্রথম লাহোরে তুলে ধরেন এই পূর্ব বাংলার সন্তান শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।
ধর্মটাও সাইনবোর্ড হিসেবে বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি। দেশভাগের চব্বিশ বছরের মাথায় পূর্ব পাকিস্তান অংশও আলাদা হয়ে যায়, বাংলাদেশ হয় এর নাম। মজার ব্যাপার হলো, এই পূর্ব বাংলার নেতাদের প্রায়ই জেলে পুরে রাখা হতো তাদের স্বায়ত্বশাসন আর ন্যায্য পাওয়া চাওয়ার কারণে। একটা সাধারণ পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যায়, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর, আর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত মোট চব্বিশ বছরের বারো বছরই পূর্ব পাকিস্তানের মুখপাত্র হয়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে জেলে কাটাতে হয়।
শুধু ধর্মকে সাইনবোর্ড বানিয়ে একটা রাষ্ট্র আলাদা করার মাথা মোটা চিন্তা সফল না হওয়াতে পাকিস্তানে এখনো চলছে আন্তর্কলহ আর বিভাজন। বেলুচিস্তান স্বাধীনতা চায়। আফগান সীমান্তের বড় একটা অংশ দখল করে রেখেছে তালেবানরা, যেখানে পাকিস্তান সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। একের পর এক হামলায় জর্জরিত সেদেশ। আরেকটা মজার ব্যাপার হলো তারা ১৪ আগষ্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করে, কিন্তু প্রথম যখন আলাদা হলো, মানে ১৯৪৭ সালে তাদের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে বলা হয় ১৫ আগষ্ট! পরের বছর ডাকটিকিটসহ সব সরকারী কাগজপত্রে ১৪ আগষ্টকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয়।
রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হলেও পাকিস্তানী চিন্তার কিছু ভূত আমাদের দেশের কিছু মানুষের মাথায়ও রয়ে গেছে। এই যেমন, সাইনবোর্ড সর্বস্ব হলেও অনেকে দাবি করে বসে বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হোক, ১৯৭৫ সালে খন্দকার মুশতাক ক্ষমতায় অাসা মাত্র মেজর ডালিম রেডিওতে বাংলাদেশকে পিপলস্ রিপাবলিক অব বাংলাদেশ না বলে, ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ বলে ঘোষণা শুরু করে। তবে অবশ্য মুশতাক সরকার পরবর্তীতে এ নিয়ে কোন কথা বাড়ায়নি। এর আগে সৌদি বাদশা বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক স্টেট করতে অনুরোধ করে, তখন বঙ্গবন্ধু প্রতিউত্তরে যুদ্ধবাজ বাদশা সৌদের নামের দেশের নাম রাখা রাষ্ট্রকে এদেশ নিয়ে মাথা ঘামাতে নিষেধ করে দেয়। জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের মতো হিন্দু কেন লিখলো, সে কারণে এই জাতীয় সংগীত বাতিল করে মুসলিম কারো গানকে জাতীয় সংগীত করার প্রস্তাব করে। আবার, জাতির পিতা প্রশ্ন এলে অনেকে বলে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ), শেখ মুজিব আবার কে? কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের জাতীয় মাতা কাকে অফিসিয়ালি বলা? মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্-র বোন ফাতেমা জিন্নাহ-কে।
ইসলাম এমন কোন ধর্ম না যে অন্য ধর্মালম্বীকে ঘৃণা করতে বলা হয়েছে। তারপরও অপব্যাখ্যা আর সংখ্যাগরিষ্ঠতার অহংকার নিয়ে পাকিস্তানী রাজনীতিকরা ইসলামকে সাইনবোর্ড বানিয়ে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। আমাদের দেশেও অনেকে ইসলামকে সাইনবোর্ড বানিয়ে নিজেদের অন্যায় আর অত্যাচারগুলো হালাল করতে চায়। ধর্মকে মেজর ফ্যাক্টর বানিয়ে ভোট নিয়ে সবাই-ই রাজনীতি করতে চায়, কিন্তু এই দেশ দেশ ভাগের পর ভিটেমাটি হারানোর বেদনা নিয়ে কোটি কোটি মানুষ নিজেদের দেশ ছাড়লো, এখনো সেই জিন্নাহ-নেহরুদের পাপ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে উপমহাদেশের হাজারো হিন্দু-মুসলিম পরিবারকে।
উগ্রপন্থীদের দেখানো স্বপ্নে শুধু ভৌগলিক অবস্থান কেন ভাগ হবে ধর্মের ভিত্তিতে। জন্মগত প্রাপ্ত এক ধর্মের কারণে কেন বয়ে বেড়াতে হবে নিজ জন্মভূমিতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে? কেন বিসর্জন দিতে হবে নিজের ভিটেমাটি? কোন ধর্ম কি কাউকে ঘরছাড়া করতে বলেছে অন্য কারো অন্য ধর্ম আলাদা হয়েছে বলে?
প্রথমে বলেছিলাম কবি আল্লামা ইকবালের কথা। জিন্নাহ্ ছাড়াও আরেকজন ছিলো কবি আল্লামা ইকবালের প্রচন্ড ভক্ত। তিনি আল্লামা ইকবালের স্নেহধন্য সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী। চিনতে পারছেন? ইনি পাকিস্তানপন্থী খ্যাত অতিবিখ্যাত রাজনীতিক দল জামায়েত ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা, যাকে উগ্রবাদের কারণে ফাঁসির দন্ডাদেশ দেয়া হয় তৎকালীন পাকিস্তানে!
বাই দ্যা ওয়ে, আজ ১৪-ই আগষ্ট। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী!
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা দেশভাগের পর ভারতের জাতীয় সংগীত হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতা লাইন থেকে এসেছে। শ্রী লংকার জাতীয় সংগীতের সুরও কবি রবীন্দ্রনাথের লেখা গান থেকে নেয়া হয়েছে। তবে এক জায়গায় আল্লামা ইকবাল এগিয়ে, সেটা হলো তার কবি স্বত্তার থেকে বেরিয়ে এসে একটা রাষ্ট্রের দাবি করে বসেছিলেন। আরও মজার ব্যাপার হলো তার দ্বারা দুটি রাষ্ট্র ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল, একটা ইরান এবং আরেকটা পাকিস্তান।
শিয়ালকোটের ছেলে ইকবাল লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি ও জার্মানী থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে ১৯০৯ সালে তার তৎকালীন দেশ বৃটিশ ভারতে ফিরে এসে আইন ব্যবসা শুরু করে ব্যর্থ হন। তারপর সাহিত্য চর্চায় জড়িয়ে পড়েন, সাফল্যও পান তবে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েন ভালোভাবে। ইকবালের লেখা জুড়ে থাকতো ইসলামী পুনর্জাগরণের গল্প। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের চিন্তানায়ক ড. আলী শরিয়তী এক সময় সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত ছিলেন। ইরানে আবার ইকবাল তার ফার্সি লেখার জন্য বিখ্যাত ছিলেন, আর তিনি ইরানে ইকবাল-ই-লাহোরী নামে পরিচিত ছিলেন। ইরানের শিয়া জনগোষ্ঠীতে তার জনপ্রিয়তা ছিলো।
ইকবালের লেখার দ্বারা খুব প্রভাবিত আরও দুজন মানুষ ছিলেন। একজন পাকিস্তানের কায়েদ-ই-আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আরেকজনের নাম এই লেখার শেষে বলছি। মুহম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন জন্মগতভাবে গুজরাটি। বাবা-মা শিয়া মতাদর্শে বিশ্বাসী। জিন্নাহ্ নিজেকে শুধু মুসলমান দাবি করতেন, যদিও তিনি ধার্মিক ছিলেন না। তার চলাফেরায় ছিলো পাশ্চাত্যের প্রভাব। সাধারণ ভারতীয়দের থেকে নিজেকে আলাদা রাখতে পরতেন কারাকুল টুপি, যা এখন জিন্নাহ্ টুপি নামে জনপ্রিয়। প্রথমদিকে জিন্নাহ ছিলেন মুসলিম লীগের মধ্যপন্থী নেতা, হিন্দু-মুসলিম ভাতৃত্ববোধ বজায় রেখে স্বাধীন ভারতই ছিলো তার ম্যান্ডেট। ১৯৩০ সালে মুসলিম লীগের অধিবেশনে আল্লামা ইকবাল প্রথম মুসলমানদের নিয়ে সর্বপ্রথম রাষ্ট্র করার প্রস্তাব উপস্থাপন করে। মোটকথা পাকিস্তানের স্বপ্ন তখনই দেখতে শুরু করে। ইসলামী পুর্ণজাগরণের স্বপ্নে বিভোর ইকবালের এই স্বপ্নের পাকিস্তান একসময় বাস্তবে রূপ নেয়, তবে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে থাকেনি, হয়েছিলো ইসলামের সাইনবোর্ড ধরে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রতি পাঞ্জাবীদের অত্যাচার-অবিচারের রাষ্ট্র। যাই হোক, সে কথায় পরে আসছি।
মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ কংগ্রেসেরও সদস্য ছিলেন একসময়, তখন একসাথে দুটো সংগঠনের সদস্য থাকা যেতো। গান্ধীর সাথে ব্যাক্তিত্বের দ্বন্দ (বিশেষ করে গান্ধীর ভারতীয় পোষাক আর ইংরেজীর পরিবর্তে ভারতীয় ভাষায় কথা বলাকে ধর্মান্ধতা মনে করতেন জিন্নাহ্) আর কংগ্রেসে প্রবল হিন্দুত্ববাদীদের প্রতাপে জিন্নাহ্ একসময় সুবিধা করতে পারলেন না।
কংগ্রেস থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসে কবি ইকবাল আর ইকবালের সমমনাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এক সময় মুসলমানদের নিয়ে আলাদা রাষ্ট্র করার জোর দাবি বৃটিশদের সামনে তুলে ধরেন। এখানে উল্লেখ্য ইসলামী রাষ্ট্রর দাবি জানালেও জিন্নাহ্ কিন্তু ইসলামিক জীবন-যাপনে অভ্যস্থ ছিলেন না, বরং তিনি নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষ হিসেবে সব জায়গায় উপস্থাপন করতেন। রাজনৈতিক কারণে তার মুসলমানদের নিয়ে আলাদা রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপন করা হলেও তাকে পেয়ে লাভবান হয়েছিল আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের দাবিদার মুসলিম লীগের নেতারা। অন্যদিকে হিন্দু রাষ্ট্রের দাবিদার নেহেরুরাও খুশী হয়েছে, কারণ তাদের দাবিও ছিলো আলাদা হিন্দু রাষ্ট্র। পরবর্তীতে বৃটিশরা এই দুই পক্ষের দাবি মেনে দুটো আলাদা রাষ্ট্র করলেও সম্পূর্ণ ভারতবর্ষকে একটি রাষ্ট্র করে হিন্দু-মুসলিমের সমন্বয়ে অবিভক্ত ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখা মহত্মা গান্ধী সবচে ব্যাথিত হয়েছিলো।
আর এই হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রুপরেখা দেখানো কংগ্রেস আর মুসলিম লীগের এই নেহরু আর জিন্নাদের রোষানলের পড়ে ঘৃণার বীজ এমনভাবে পড়ে যে লাখ লাখ হিন্দু আর মুসলিম দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে। লাখ লাখ মানুষ ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় নিহত হয়। এদের ঘৃণা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে মুসলিম প্রধান এলাকায় হিন্দুদের দেখামাত্র হত্যা করা হতো আর হিন্দু প্রধান এলাকায় মুসলমানদের দেখামাত্র হত্যা করা হতো। সত্যি বলতে সেই হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ এখনো উত্তরাধিকারীসূত্রে আমাদের এই উপমহাদেশ বহন করে যাচ্ছে। এখনও মুসলিমপ্রধান এলাকায় মুসলিম পরিবারগুলোতে হিন্দুদের ঘৃণা করার রীতি চলছে, হিন্দুপ্রধান এলাকায় হিন্দুদের পরিবারে মুসলমানদের ঘৃণা করার রীতি চলে আসছে।
কবি ইকবালের মতোই শিয়ালকোটের ছেলে ছিলো কুলদীপ নায়ার। প্রথম আলোর কল্যাণে এই দেশেও পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠা কুলদীপ নায়ার মূলত ভারতের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকদের একজন। তৎকালীন বৃটিশ ভারতের শিয়ালকোটে তার বেড়ে ওঠা। দেশভাগের ফলস্বরুপ শতকরা ৬০ ভাগ মুসলিমদের দখলে থাকা শিয়ালকোট ছেড়ে অজানা উদ্দেশ্যে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে এক পারিবারিক বন্ধুর সহায়তায় বর্তমান ভারতের দিকে পালাতে হয় তাকেও। এখনো সুযোগ পেলে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে দেশভাগের ফলে সৃষ্ট হৃদয় ক্ষতের কথা বলে বেড়ান নিজের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হওয়া কুলদীপ নায়ার। অথচ ভারত আর পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্র ঘটনের সময় দুটো রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়া নেহরু আর জিন্নাহ্ দুজনেই বলেছিলেন তাদের দেশে ভিন্ন ধর্মালম্বীরা নিরাপদে থাকবে, ধর্ম ভিন্ন হলেও দেশ সবার একই হবে!
ধর্ম দিয়ে মানচিত্রে কাঁচি চালিয়েও রাজনীতিকদের স্বভাবসুলভ আশ্বাসের মতোই ভারত আর পাকিস্তানের প্রথম দুই রাষ্ট্রনায়ক নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ প্রমাণে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়ে। ভারতের সংবিধান লিখতে দেয় হয় দলিত সম্প্রদায়ের ভীমরাও রামজি আম্বেদকর। পাকিস্তানের জিন্নাহ্ বেচে নিলেন পতাকাকে। পতাকার গাঢ় সবুজ অংশটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রতীক এবং খাড়া সাদা অংশটি পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যলঘুদের প্রতীক। মধ্যভাগে উদীয়মান চাঁদ অগ্রগতির প্রতীক এবং পাঁচ কোনবিশিষ্ট সাদা তারকাটির পাঁচটি কোন হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতীক।
পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরও অনেকদিন নিজস্ব সংবিধান ছিলো না। ছিলো না জাতীয় সংগীতও। নিজেদের ইসলামিক স্টেট হিসেবে অফিসিয়ালি ঘোষণা করে ১৯৫৬ সালে। রাষ্ট্রেকে জিন্নাহ্-র ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ইসলামী স্টেটে ঘোষণার আগে জাতীয় সংগীত নিয়েও ধর্ম-অধর্ম খেলা হয়। দেশভাগের পরপরই মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ লাহোরের হিন্দু কবি জগন্নাথ আজাদকে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত লেখার জন্য বলেন। উদ্দেশ্য, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ দেয়া। জগন্নাথ আজাদের লেখা সংগীত আঠারো মাস জাতীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এর মাঝে জিন্নাহ্-র মৃত্যু হয়। ডানপন্থী শাসকরা জগন্নাথের লেখাকে জাতীয় সংগীত রাখবে। জাতীয় সংগীত কমিটি করে পরে ছয় বছর সময় নিয়ে 'পাক সার জমিন সাদ বাদ'-কে জাতীয় সংগীত করা হয়।
ধর্মনিরপেক্ষতার চাদর উঠিয়ে দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র হওয়ার আগেই পাকিস্তানজুড়ে অসন্তোষের স্বীকার হতে থাকে রাষ্ট্র। বেশি করে আঘাত আসছিলো পূর্ব পাকিস্তান থেকে। অথচ পাকিস্তান সৃষ্টির মূল কারিগর প্রতিষ্ঠান মুসলিম লীগের সৃষ্টিই পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকাতে। ১৯০৬ সালে।অনেকই হয়তো জানে না, মুসলিম লীগ গঠিত হয় ঢাকার শাহবাগে নবাব সলিমুল্লাহ্-র তত্ত্বাবধানে। তখন নাম ছিলো অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ। আর মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রপুঞ্জ গঠনের প্রস্তাবটা প্রথম লাহোরে তুলে ধরেন এই পূর্ব বাংলার সন্তান শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।
ধর্মটাও সাইনবোর্ড হিসেবে বেশিদিন ধরে রাখতে পারিনি। দেশভাগের চব্বিশ বছরের মাথায় পূর্ব পাকিস্তান অংশও আলাদা হয়ে যায়, বাংলাদেশ হয় এর নাম। মজার ব্যাপার হলো, এই পূর্ব বাংলার নেতাদের প্রায়ই জেলে পুরে রাখা হতো তাদের স্বায়ত্বশাসন আর ন্যায্য পাওয়া চাওয়ার কারণে। একটা সাধারণ পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যায়, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর, আর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত মোট চব্বিশ বছরের বারো বছরই পূর্ব পাকিস্তানের মুখপাত্র হয়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে জেলে কাটাতে হয়।
শুধু ধর্মকে সাইনবোর্ড বানিয়ে একটা রাষ্ট্র আলাদা করার মাথা মোটা চিন্তা সফল না হওয়াতে পাকিস্তানে এখনো চলছে আন্তর্কলহ আর বিভাজন। বেলুচিস্তান স্বাধীনতা চায়। আফগান সীমান্তের বড় একটা অংশ দখল করে রেখেছে তালেবানরা, যেখানে পাকিস্তান সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। একের পর এক হামলায় জর্জরিত সেদেশ। আরেকটা মজার ব্যাপার হলো তারা ১৪ আগষ্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করে, কিন্তু প্রথম যখন আলাদা হলো, মানে ১৯৪৭ সালে তাদের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে বলা হয় ১৫ আগষ্ট! পরের বছর ডাকটিকিটসহ সব সরকারী কাগজপত্রে ১৪ আগষ্টকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয়।
রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ আলাদা হলেও পাকিস্তানী চিন্তার কিছু ভূত আমাদের দেশের কিছু মানুষের মাথায়ও রয়ে গেছে। এই যেমন, সাইনবোর্ড সর্বস্ব হলেও অনেকে দাবি করে বসে বাংলাদেশ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হোক, ১৯৭৫ সালে খন্দকার মুশতাক ক্ষমতায় অাসা মাত্র মেজর ডালিম রেডিওতে বাংলাদেশকে পিপলস্ রিপাবলিক অব বাংলাদেশ না বলে, ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ বলে ঘোষণা শুরু করে। তবে অবশ্য মুশতাক সরকার পরবর্তীতে এ নিয়ে কোন কথা বাড়ায়নি। এর আগে সৌদি বাদশা বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশকে ইসলামিক রিপাবলিক স্টেট করতে অনুরোধ করে, তখন বঙ্গবন্ধু প্রতিউত্তরে যুদ্ধবাজ বাদশা সৌদের নামের দেশের নাম রাখা রাষ্ট্রকে এদেশ নিয়ে মাথা ঘামাতে নিষেধ করে দেয়। জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের মতো হিন্দু কেন লিখলো, সে কারণে এই জাতীয় সংগীত বাতিল করে মুসলিম কারো গানকে জাতীয় সংগীত করার প্রস্তাব করে। আবার, জাতির পিতা প্রশ্ন এলে অনেকে বলে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ), শেখ মুজিব আবার কে? কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের জাতীয় মাতা কাকে অফিসিয়ালি বলা? মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্-র বোন ফাতেমা জিন্নাহ-কে।
ইসলাম এমন কোন ধর্ম না যে অন্য ধর্মালম্বীকে ঘৃণা করতে বলা হয়েছে। তারপরও অপব্যাখ্যা আর সংখ্যাগরিষ্ঠতার অহংকার নিয়ে পাকিস্তানী রাজনীতিকরা ইসলামকে সাইনবোর্ড বানিয়ে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। আমাদের দেশেও অনেকে ইসলামকে সাইনবোর্ড বানিয়ে নিজেদের অন্যায় আর অত্যাচারগুলো হালাল করতে চায়। ধর্মকে মেজর ফ্যাক্টর বানিয়ে ভোট নিয়ে সবাই-ই রাজনীতি করতে চায়, কিন্তু এই দেশ দেশ ভাগের পর ভিটেমাটি হারানোর বেদনা নিয়ে কোটি কোটি মানুষ নিজেদের দেশ ছাড়লো, এখনো সেই জিন্নাহ-নেহরুদের পাপ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে উপমহাদেশের হাজারো হিন্দু-মুসলিম পরিবারকে।
উগ্রপন্থীদের দেখানো স্বপ্নে শুধু ভৌগলিক অবস্থান কেন ভাগ হবে ধর্মের ভিত্তিতে। জন্মগত প্রাপ্ত এক ধর্মের কারণে কেন বয়ে বেড়াতে হবে নিজ জন্মভূমিতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে? কেন বিসর্জন দিতে হবে নিজের ভিটেমাটি? কোন ধর্ম কি কাউকে ঘরছাড়া করতে বলেছে অন্য কারো অন্য ধর্ম আলাদা হয়েছে বলে?
প্রথমে বলেছিলাম কবি আল্লামা ইকবালের কথা। জিন্নাহ্ ছাড়াও আরেকজন ছিলো কবি আল্লামা ইকবালের প্রচন্ড ভক্ত। তিনি আল্লামা ইকবালের স্নেহধন্য সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী। চিনতে পারছেন? ইনি পাকিস্তানপন্থী খ্যাত অতিবিখ্যাত রাজনীতিক দল জামায়েত ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা, যাকে উগ্রবাদের কারণে ফাঁসির দন্ডাদেশ দেয়া হয় তৎকালীন পাকিস্তানে!
বাই দ্যা ওয়ে, আজ ১৪-ই আগষ্ট। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী!