Wednesday 9 March 2016

বেদনার সুর

যে মানুষটাকে রাত-দুপুরে গালি দেই আর খুঁজে বেড়াই দোষ ত্রুটি, সেই মানুষটার কিছু গুণও আছে। তার কিছু কষ্টও আছে। আছে না বলা কিছু বেদনা। মানুষের মনের ভাষা বোঝার জন্য কাগুজে কোন বর্ণ নেই। বুকভরা হাহাকার লিপিবদ্ধের কোন শব্দ নেই। বাক্য দিয়ে প্রকাশ করা যায় না বুকের মধ্যে থাকা শূন্যতা।

প্রকাশের অভাবে কত কত মানুষ আজ-ও নিজেই নিজের কবিতার কবি, নিজেই পাঠক.. নিজেই সমালোচক। যতই মানুষের ঘনিষ্ট হই, ততই তাদের বেদনার সুর কানের কাছাকাছি আসে। কষ্ট-দুঃখ-বেদনা এসব আছে বলেই প্রত্যেকটা মানুষই আপন কষ্টের বংশীবাদক, সুরটা সবার কানে যায় না। যারা পাশে গিয়ে বসে, একান্তে সময় কাটায়.. তারাই শোনে। মানুষগুলো সব দুঃখী, প্রকাশ্যে-কিংবা অপ্রকাশ্যে।

০৮/০৩/২০১৬
উত্তরা, ঢাকা।

বুক রিভিউ: বিএনপি সময়-অসময়

গত চার-পাঁচদিন বেশ সময় নিয়ে পড়ে শেষ করলাম লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের লেখা সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত 'বিএনপি : সময় অসময়' গ্রন্থটি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপির গত ৩৭ বছরের উঠা-নামাই শুধু নয়, বিএনপি গঠনের প্রেক্ষাপট আর মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বিএনপি প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের কার্যকলাপ নিয়ে বিস্তারিত লেখা আছে এ বইয়ে। দশটি ভাগে ভাগ করে বিএনপির সম্পূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরার প্রয়াসটা চমৎকার ছিলো।

'বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ'কে সরিয়ে 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ'কে সামনে এনে একদম ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে গড়ে উঠে বিএনপি বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, যদিও প্রথমে 'জাগদল' আর পরে 'বিএনএফ' থেকে 'বিএনপি'তে পরিণত হয় দলটি। লেখক প্রথমেই জিয়ার মেজর থেকে প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠার বর্ণনাটা খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন।



একজন সামরিক ব্যাক্তিত্ব হিসেবে জিয়ার দুর্বল আর সবল দিকগুলো তুলে ধরে কিভাবে রাজনৈতিকদের মতো বক্তিতা দিয়ে মানুষ পটানোর ক্ষমতা না থাকার স্বত্তেও খালকাটাসহ মাইলের পর মাইল হেঁটে বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন তারও বিস্তারিত বর্ণনা বেশ আকর্ষণীয় দিক এই বইয়ের। একজন সেনাপতি থেকে একজন রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার বর্ণনটা পূর্ণাঙ্গ ক্যানভাসেই ফুটে উঠেছে মনে হয়েছে। জিয়ার মৃত্রুর পর সাত্তারের বিএনপি এবং তারপর হাতবদল হয়ে খালেদা জিয়ার বিএনপির হালধরার বর্ণনাটাও যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বর্ণনা করেছেন লেখক। একই ক্যানভাসে উঠে এসেছে এরশাদের সামরিক শাসন আর তৎকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধী দলের ভূমিকা। এরপর নব্বইয়ের দশকে বিএনপির নবজাগরণ, ক্ষমতাসীন হয়ে তাদের নেতাদের কর্মকান্ড আর ছিয়ানব্বইয়ের নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বিতর্কিত কার্যকলাপ নিয়ে বর্ণনাও অনেক তথ্যবহুল। তবে ছিয়ানব্বইয়ের পর থেকে বিরোধী দলে বিএনপির কর্মকান্ড, ২০০১-০৬ এর বিএনপির কর্মকান্ড কিংবা পরবর্তীতে বিএনপির কর্মকান্ড অত বড় পরিসরে আসেনি যদিও যতটুকু লেখক তুলে ধরেছেন তাতেই স্পষ্টতই বিএনপির নেতৃত্বের সংকট, ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রবণতা আর একক নেতৃত্বের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ার কথা বেশ নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরেছেন।

এদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিজস্ব ইতিহাস সংরক্ষণের প্র্যাকটিস খুব একটা নেই। সেই দিক বিবেচনায় এই বইটি বেশ ভাল একটি নমুনা হতে পারে। প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন বইয়ের আর পত্রিকার রেফারেন্স ব্যবহৃত হয়েছে এ বইয়ে, বইটি লিখতে নেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিএনপির সাথে জড়িত অনেকেরই সাক্ষাৎকার। মুখের কথা শুনে শুনে মিথ বিশ্বাস না করে বরং এমন গ্রন্থ পড়ে যে কোন সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক কর্মীরই একটি দলের আদর্শ আর অতীত কর্মকান্ড তথা ইতিহাস জানতে সহায়ক হতে পারে। সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই।

রিভিউ: ৮.৫/১০