Friday 26 February 2016

বুক রিভিউঃ যে প্রহরে নেই আমি - রাসয়াত রহমান

উপন্যাসের শুরুটা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের ঘটনা। গল্পটা যাকে দিয়ে শুরু হয় সে এক আমেরিকান। নাম তার এন্ডারসন, এক ভবঘুরে আমেরিকান। ভাবছেন তার সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কি সম্পর্ক? উপন্যাসটায় একটার পর একটা ঘটনা যখন মোড়ে মোড়ে বাঁক নিবে তখন ঠিক তখন গল্পের কোন এক গলির মুখে এসে এই আমেরিকানের কোন আত্মীয় এসে হাজির হবে, গল্পটা শুরুর মতো শেষটায় এসে কোন এক বিদেশীর সামান্য ছোঁয়ায় হয়তো পূর্ণতা পাবে!

রহস্য বাদ দিয়ে উপন্যাসের মূল অংশে আসা যাক। গল্প আমাদের এই প্রজন্মের। মানুষ স্বপ্ন দেখে, স্বপ্নই মানুষকে বড় করে তোলে। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগে কোন কোন দুর্ঘটনা জীবনের স্বপ্নটাকে দূর আকাশের তারাতে রূপান্তর করে। নায়লা তেমনই এক চরিত্র। অল্প বয়সে স্বপ্নভঙ্গ হয়ে এক ব্যাংকারের ঘরণী। দুই সন্তান, জেরিন আর নাফি। জেরিনের বন্ধু তারিফ। শহুরে উচ্চবিত্ত বলতে যা বোঝায় সেই বিত্তবান কোন এক পরিবারের সন্তান। গল্পের এক মোড়ে এসে তারিফের পাশে দাঁড়াবে তার চাচা-চাচী জামিল আর সামান্থা। সামান্থা আর নায়লা স্কুল জীবনের সহপাঠী। মফস্বলের স্কুলে একসাথে পড়াশোনা ছিলো। দুইজনের জীবন দুই বাঁকে বেঁকে যায়। সামান্থা আইবিএর টিচার। সামান্থার স্বামী জামিলও নায়লার পূর্বপরিচিত, একই শহরে বেড়ে ওঠা। কিন্তু এই পরিচয়ের মাঝে কিন্তু ছিলো। কিন্তুটা উপন্যাসে লেখক খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

বাকী রইলো রাজু। বাগেরহাটের ছেলে। খুলনায় পড়ালেখা করেছে, এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় এসেছে। পিওর টেলেন্ট যাকে বলে তেমন মেধাবী। প্রথমেই যে বলেছি উপন্যাসে ঘটনা শুধু বাঁক নেয়, আসলে বাঁক নেয় না। এই রাজু ছেলেটা বাঁক খাওয়ায়। ক্রিকেটে যেমন স্পিনার বল করার সময় বলের বাঁক নিয়ন্ত্রণ করে, ঠিক তেমন এই ছেলেটা উপন্যাসের অনেকাংশ জুড়ে বাঁক খাওয়ায়। এই ছেলেকে এক একবার এক এক জায়গায় দেখা যাবে। কখনো ঢাকার কোন মেছে, আবার কখনো জামিল-সামান্থার বাসায় আশ্রিত হতে, আবার কখনো নায়লার বাসায় অতিথি হিসেবে আর কখনোবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ্ হলে।

জীবনটা অদ্ভূত। আর অদ্ভূত জীবনটার রহস্যগুলো আবিষ্কার করে বসে জীবনটা সহজ করে রাজুর মতো মানুষেরা। স্বপ্ন হারানো মানুষের স্বপ্নকে খুঁজে দেয়া, চরম বিপর্যস্ত মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে হলেও বিপদমুক্ত করা -এসব তার মতো সাধারণ মানুষের অসাধারণ কাজ। লেখক এই কাজটা খুব সুন্দরভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন।

বাকী রইলো মুক্তিযোদ্ধা জলিল সাহেব। এই চরিত্রটা উপন্যাসকে সম্পূর্ণতা দিয়েছেন।

বইছিলাম লেখক রাসয়াত রহমান জিকোর নতুন উপন্যাস 'যে প্রহরে নেই আমি'। বইটা কিনে কখন যে পড়তে বসে শেষ করে ফেলেছি টের পাইনি। খুব চমৎকারভাবে একটার পর একটা ঘটনার সিকোয়েন্স বর্ণনা। লেখক যতই দাবি করুক তিনি সময় দিয়ে লিখতে পারেননি, তবে আমার পড়া তার সেরা বই এটি। তুলনা দেয়া ঠিক হবে কিনা জানিনা, তবে গল্প শেষ করে মনে হলো 'আরেহ্! এতো দেখি চেতন ভগতকেও হার মানানো গল্প লিখলো!'

এক কথায় অসাধারণ এক উপন্যাস। না পড়লে মিস করবেন টাইপের।


ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১৬

Thursday 18 February 2016

দীর্ঘশ্বাস

: 'কারো সাথে সম্পর্ক আছে?'
প্রায়ই স্মিত হেসে উত্তর দেই, 'নেই'। আসলে মিথ্যে বলা হয়।

সম্পর্ক আছে। দীর্ঘশ্বাসের সম্পর্ক। হুট করে অনেক বছর পর এখানে-ওখানে কারো কারো দেখা পেলে শ্বাসটা দীর্ঘ হয়। কবি হলে বলতাম, 'এমন তো হওয়ার ছিলো না!' জীবনানন্দ হলে বলতাম, 'এতদিন কোথায় ছিলেম?'

বলা হয় না কিছুই। না তাকে, না অন্য কাউকে। না গদ্যে, না পদ্যে। কোথায় না। পারলে নির্মলেন্দুর মতো বলতাম, 'নীরা ভালোবাসেনি!'
কিংবা লতিফুর ইসলাম শিবলীর মতো কোন গ্রিক তরুণীকে বলতাম, 'তুমি কি আমার আকাশি হবে?'

বলা হয় না কাউকে কিছুই। শুধু বুকের মধ্যে পাথর চেপে রাখা, আর সুদীর্ঘ হাহাকারে বিলীন হওয়া অার্তনাদের প্রতিধ্বনি শুনি।

ভূপেনের মতো যদি বলি,
'চেনা চেনা সুরটিকে কিছুতে না চিনি।
নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি।
প্রতিধ্বনি শুনি আমি প্রতিধ্বনি শুনি।'