আজকে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যুদিবস। এক পরিচিত ভাইয়ের প্রশ্ন ছিলো জিয়া কেন জনপ্রিয়তা পাইছিলো। তার উত্তর দিতে গিয়ে একটা বড় লেখা লিখে ফেলছি গত আধা ঘন্টায়! এগুলো লিখছিলাম। চাইলে পড়তে পারেনঃ
১. জিয়া ব্যাক্তিগতভাবে সৎ ও কঠোর ছিলো।
২. সে যুদ্ধবিধ্বস্ত, প্রাকৃতিক দূর্যোগ আর রাজনৈতিক দূর্যোগ বিধ্বস্ত একটা দেশের হাল ধরে তখন খাওয়ার কষ্টটা দূর করতে পারছে। পাশাপাশি মিডল-ইস্টে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে।
৩. খালকাটা কর্মসূচী ব্যাপক সাড়া ফেলছিলো। একটা প্রেসিডেন্ট নিজে খাল কাঁটতেছে, এটা দেখেই অনেক মানুষ তার প্রেমে পড়ে গেছে। (যেটা জনগণ জানতো না সেটা হলো জিয়া প্রথম দিকে বক্তৃতা দেয়ায় আনাড়ী ছিলো, সেটা ঘুঁচতে তাকে তার রাজনৈতিক উপদেষ্টারা এমন কিছু করাতে চেয়েছে যাতে সে জনগণের কাছে যেতে পারে। তার খালাকাটা কর্মসূচীটা মূলত ওই চিন্তারই প্রোডাক্ট।)
৪. জিয়া সামরিক বাহিনীর লোক, সে একটানা প্রচুর হাঁটতে পারতো। তার এক সাবেক রাজনৈতিক সহকর্মীরই এক ইন্টারভিউতে বলতে দেখেছি যে জিয়া প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অনেক এলাকা হেঁটেছেন আর জনগণের সাথে হাত মিলিয়ে খোঁজ খবর নিতেন। এদেশের মানুষ অল্পতেই তুষ্ট। আপনার প্রশাসনিক সাফল্য আর সততার চেয়ে এসব আবেগী কাজের দাম বেশি দেয়। একারণেই এটা ব্যাপক প্রচার হয় আর এমন কাজ বঙ্গবন্ধু পরবর্তী আর কোন সরকারপ্রধানই করেনি। সে সূত্রে জিয়ার জনপ্রিয়তা আসাটা স্বাভাবিক।
৫. (একটু ইতিহাস টেনে এনে লম্বা করে বলছি)
শুনতে খারাপ দেখালেও এটা সত্য যে এদেশের জনসংখ্যার বড় একটা অংশ পাকিস্থানপন্থী। এটা অনেকের ইচ্ছাকৃত পাকিস্থানপন্থা বেছে নেয়ার মতো না। ৪৭'এ দেশ ভাগের সময় পাকিস্তান-ভারত দুভাগের সময়ই এদের মাথায় ডুকে যায় যে পাকিস্তান হলো মুসলিম রাষ্ট্র, একমাত্র মুসলিমরা শাসন করবে। কিন্তু জিন্নাহদের এই মুসলিমদের শাসন কনসেপ্টের কারণেই বর্তমান বাংলাদেশ বা তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের সাথে বাঙ্গালি মুসলমানদের মিলেমিশে থাকাটা তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতাদের চোখের বিষ হয়ে উঠেছিলো। তাই তখন খুব অপপ্রচার হতো যে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরা প্রকৃত মুসলমান না, তারা মনে মনে হিন্দু। পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ শিক্ষক হিন্দু, অতএব ওখানে সঠিকভাবে মুসলমান পয়দা হয় না। সংস্কৃতিক পার্থক্য তো ছিলোই তাদের সাথে, তাই এখানকার কালচারকে তারা হিন্দু কালচার হিসেবে প্রচার করে আর ধার্মিক মুসলমানদের জন্য ওসব হারাম দেখিয়ে তারা ন্যায্য পাওয়াগুলো থেকেও বঞ্চিত করতো। তাই একসময় পাকিস্থানিরা এখানকার হিন্দু-মুসলিম সবার উপর অ্যাটাক করে, যুদ্ধে হত্যা-ধর্ষণকে ডিফেন্ড করে এই বলে যে এদেশের মানুষ পাক-পবিত্র ইসলামী রাষ্ট্র চায় না তাই যুদ্ধে নেমেছে। রাষ্ট্র বিরোধী হিসেবে তাদের হত্যা করা জায়েজ আর তাদের নারীদের ধর্ষণ করাও জায়েজ। (গুল হাসান নামের এক পাকি জেনারেলের বইয়ে তাদের মানসিকতার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত পড়েছিলাম।) যাই হোক, খেয়াল করলে দেখবেন তখন শুধু ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানকে নিজের মনে করে অনেকেই ওদের ওসব গুজবকে বিশ্বাস করে বা ধারণ করে অনেক বাংলাদেশীই রাজাকারী করেছিলো। অনেকের ধারণা তারা ধর্ম ও রাষ্ট্রের জন্য বড় কিছু করছে, তাই অনেক রাজাকারই অন্যের ঘরের মেয়ে-বউদের পাকিদের হাতে তুলে দিতে দ্বিধান্বিত হয়নি। যাই হোক, ধর্ম প্লেইড এ মেজর রোল টু বি পাকিস্তানপন্থী। তখনও সঠিকভাবে ধর্মকে না জেনে শুধু নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য ধর্মকে অস্ত্র বানানোর লোক ছিলো, যুুদ্ধের বছর দশেক পর (জিয়ার শাসনামলেও) ছিলো, এখনও আছে।
জিয়া তখন অনেক পাকিস্থানপন্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। শাহ আজীজের মতো রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলো। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাটার সাথে সাথে রাজাকারদেরও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞাটা উঠিয়ে নিয়েছিলো। এতে মূলত মুসলীম লীগপন্থীরা খুশী হয়েছিলো।
সংবিধানে বিসমিল্লাহ্ সংযোজন করাতে মুসলামনরা খুশী হয়েছিল। আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে খুশী করতে পেরেছিলো, যদিও এতে জনগণের কোন লাভ হয়নি তবে এক প্রকার নেতারা হিন্দুদের ঘরবাড়ী দখল করতে বা তাদের উপর অত্যাচার করার সুযোগটা বেশি করে পেয়ে বসেছিল। (হিন্দুদের ঘরবাড়ী আগে-পরে দখল হয়েছে , তবে কাগজে কলমে হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর জনগণ হিসেবে পরোক্ষ স্বীকৃতি তখনই চলে এসেছিলো)। আরেকটা জিনিস হলো, পাকিস্তান আমলের মুসলিম লীগের অনেক নেতা বিএনপিতে ঢুকে পড়েছিলো পরবর্তীতে। আর সেনাবাহিনীতে পাকিস্তানফেরত আর্মি অফিসারদের গুরুত্ব দেয়ার কারণেই মূলত জিয়া তার একসময়ের মুক্তিযোদ্ধ সহকর্মীদের রোষানলে পড়তে হয়েছিলো আর তার সুযোগ নিয়েই বাহিনীর চট্টগ্রামের একটা অংশের লোক তাকে হত্যা করে। মৃত্যুর প্রায় দশবছর পরও তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলো, যদিও আমার ধারণা নেতা হিসেবে খালেদা জিয়া কোন জাতেরই না। বরং বর্তমান বিএনপির দুর্দশার জন্য খালেদা জিয়ার অদূরদর্শীতারও বড় রকমের দায়ী।
(মেজর জিয়ার ব্যাপারে একটা মজার ব্যাপার হলো জিয়া ভালো করে বাংলা লিখতে বা পড়তে জানতো না। পড়াশোনার জন্য বেশির ভাগ সময়ই পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সাক্ষরেও জিয়াউর রহমান না লিখে শুধু জিয়া লিখতেন। যদিও তার ডাক নাম কমল। আর প্রশাসক হিসেবে প্রায় সফল বলা গেলেও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কর্ণেল তাহেরকে ফাঁসিসহ অনেক সেনা সদস্যকে হত্যার জন্য তাকে দায়ী করা হয়। মানে যতটা দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয় ততটা না। তবে সে যে দূরদর্শী আর ভাল প্রশাসক ছিলো তা অনস্বীকার্য।)
৩১ মে, ২০১৬
উত্তরা, ঢাকা।
১. জিয়া ব্যাক্তিগতভাবে সৎ ও কঠোর ছিলো।
২. সে যুদ্ধবিধ্বস্ত, প্রাকৃতিক দূর্যোগ আর রাজনৈতিক দূর্যোগ বিধ্বস্ত একটা দেশের হাল ধরে তখন খাওয়ার কষ্টটা দূর করতে পারছে। পাশাপাশি মিডল-ইস্টে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে।
৩. খালকাটা কর্মসূচী ব্যাপক সাড়া ফেলছিলো। একটা প্রেসিডেন্ট নিজে খাল কাঁটতেছে, এটা দেখেই অনেক মানুষ তার প্রেমে পড়ে গেছে। (যেটা জনগণ জানতো না সেটা হলো জিয়া প্রথম দিকে বক্তৃতা দেয়ায় আনাড়ী ছিলো, সেটা ঘুঁচতে তাকে তার রাজনৈতিক উপদেষ্টারা এমন কিছু করাতে চেয়েছে যাতে সে জনগণের কাছে যেতে পারে। তার খালাকাটা কর্মসূচীটা মূলত ওই চিন্তারই প্রোডাক্ট।)
৪. জিয়া সামরিক বাহিনীর লোক, সে একটানা প্রচুর হাঁটতে পারতো। তার এক সাবেক রাজনৈতিক সহকর্মীরই এক ইন্টারভিউতে বলতে দেখেছি যে জিয়া প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অনেক এলাকা হেঁটেছেন আর জনগণের সাথে হাত মিলিয়ে খোঁজ খবর নিতেন। এদেশের মানুষ অল্পতেই তুষ্ট। আপনার প্রশাসনিক সাফল্য আর সততার চেয়ে এসব আবেগী কাজের দাম বেশি দেয়। একারণেই এটা ব্যাপক প্রচার হয় আর এমন কাজ বঙ্গবন্ধু পরবর্তী আর কোন সরকারপ্রধানই করেনি। সে সূত্রে জিয়ার জনপ্রিয়তা আসাটা স্বাভাবিক।
৫. (একটু ইতিহাস টেনে এনে লম্বা করে বলছি)
শুনতে খারাপ দেখালেও এটা সত্য যে এদেশের জনসংখ্যার বড় একটা অংশ পাকিস্থানপন্থী। এটা অনেকের ইচ্ছাকৃত পাকিস্থানপন্থা বেছে নেয়ার মতো না। ৪৭'এ দেশ ভাগের সময় পাকিস্তান-ভারত দুভাগের সময়ই এদের মাথায় ডুকে যায় যে পাকিস্তান হলো মুসলিম রাষ্ট্র, একমাত্র মুসলিমরা শাসন করবে। কিন্তু জিন্নাহদের এই মুসলিমদের শাসন কনসেপ্টের কারণেই বর্তমান বাংলাদেশ বা তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের সাথে বাঙ্গালি মুসলমানদের মিলেমিশে থাকাটা তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতাদের চোখের বিষ হয়ে উঠেছিলো। তাই তখন খুব অপপ্রচার হতো যে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরা প্রকৃত মুসলমান না, তারা মনে মনে হিন্দু। পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ শিক্ষক হিন্দু, অতএব ওখানে সঠিকভাবে মুসলমান পয়দা হয় না। সংস্কৃতিক পার্থক্য তো ছিলোই তাদের সাথে, তাই এখানকার কালচারকে তারা হিন্দু কালচার হিসেবে প্রচার করে আর ধার্মিক মুসলমানদের জন্য ওসব হারাম দেখিয়ে তারা ন্যায্য পাওয়াগুলো থেকেও বঞ্চিত করতো। তাই একসময় পাকিস্থানিরা এখানকার হিন্দু-মুসলিম সবার উপর অ্যাটাক করে, যুদ্ধে হত্যা-ধর্ষণকে ডিফেন্ড করে এই বলে যে এদেশের মানুষ পাক-পবিত্র ইসলামী রাষ্ট্র চায় না তাই যুদ্ধে নেমেছে। রাষ্ট্র বিরোধী হিসেবে তাদের হত্যা করা জায়েজ আর তাদের নারীদের ধর্ষণ করাও জায়েজ। (গুল হাসান নামের এক পাকি জেনারেলের বইয়ে তাদের মানসিকতার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত পড়েছিলাম।) যাই হোক, খেয়াল করলে দেখবেন তখন শুধু ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানকে নিজের মনে করে অনেকেই ওদের ওসব গুজবকে বিশ্বাস করে বা ধারণ করে অনেক বাংলাদেশীই রাজাকারী করেছিলো। অনেকের ধারণা তারা ধর্ম ও রাষ্ট্রের জন্য বড় কিছু করছে, তাই অনেক রাজাকারই অন্যের ঘরের মেয়ে-বউদের পাকিদের হাতে তুলে দিতে দ্বিধান্বিত হয়নি। যাই হোক, ধর্ম প্লেইড এ মেজর রোল টু বি পাকিস্তানপন্থী। তখনও সঠিকভাবে ধর্মকে না জেনে শুধু নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য ধর্মকে অস্ত্র বানানোর লোক ছিলো, যুুদ্ধের বছর দশেক পর (জিয়ার শাসনামলেও) ছিলো, এখনও আছে।
জিয়া তখন অনেক পাকিস্থানপন্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। শাহ আজীজের মতো রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলো। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাটার সাথে সাথে রাজাকারদেরও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞাটা উঠিয়ে নিয়েছিলো। এতে মূলত মুসলীম লীগপন্থীরা খুশী হয়েছিলো।
সংবিধানে বিসমিল্লাহ্ সংযোজন করাতে মুসলামনরা খুশী হয়েছিল। আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে খুশী করতে পেরেছিলো, যদিও এতে জনগণের কোন লাভ হয়নি তবে এক প্রকার নেতারা হিন্দুদের ঘরবাড়ী দখল করতে বা তাদের উপর অত্যাচার করার সুযোগটা বেশি করে পেয়ে বসেছিল। (হিন্দুদের ঘরবাড়ী আগে-পরে দখল হয়েছে , তবে কাগজে কলমে হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণীর জনগণ হিসেবে পরোক্ষ স্বীকৃতি তখনই চলে এসেছিলো)। আরেকটা জিনিস হলো, পাকিস্তান আমলের মুসলিম লীগের অনেক নেতা বিএনপিতে ঢুকে পড়েছিলো পরবর্তীতে। আর সেনাবাহিনীতে পাকিস্তানফেরত আর্মি অফিসারদের গুরুত্ব দেয়ার কারণেই মূলত জিয়া তার একসময়ের মুক্তিযোদ্ধ সহকর্মীদের রোষানলে পড়তে হয়েছিলো আর তার সুযোগ নিয়েই বাহিনীর চট্টগ্রামের একটা অংশের লোক তাকে হত্যা করে। মৃত্যুর প্রায় দশবছর পরও তার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলো, যদিও আমার ধারণা নেতা হিসেবে খালেদা জিয়া কোন জাতেরই না। বরং বর্তমান বিএনপির দুর্দশার জন্য খালেদা জিয়ার অদূরদর্শীতারও বড় রকমের দায়ী।
(মেজর জিয়ার ব্যাপারে একটা মজার ব্যাপার হলো জিয়া ভালো করে বাংলা লিখতে বা পড়তে জানতো না। পড়াশোনার জন্য বেশির ভাগ সময়ই পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সাক্ষরেও জিয়াউর রহমান না লিখে শুধু জিয়া লিখতেন। যদিও তার ডাক নাম কমল। আর প্রশাসক হিসেবে প্রায় সফল বলা গেলেও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কর্ণেল তাহেরকে ফাঁসিসহ অনেক সেনা সদস্যকে হত্যার জন্য তাকে দায়ী করা হয়। মানে যতটা দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয় ততটা না। তবে সে যে দূরদর্শী আর ভাল প্রশাসক ছিলো তা অনস্বীকার্য।)
৩১ মে, ২০১৬
উত্তরা, ঢাকা।
No comments:
Post a Comment