১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে মার্চের ১৬/১৭ তারিখ যুক্তরাষ্ট্র জাপানের কোবে কুখ্যাত 'বোম্বিং অব কোব' নামের বোমা হামলা চালালে সাধারণ জনগণের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষের বাড়ী পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় আর দশ লাখ মানুষের বাড়ী আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এমনি একটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ছেলে ছিলো একিইউকি নোসাকা। ওই বোমা হামলায় তার পিতা মারা যায়, দুই বোন মারা যায় অসুস্থতায় আর অপুষ্টিতে। চারপাশে পুঁড়ে যাওয়া ঘরবাড়ী, চোখের সামনে অপুষ্টিতে মরে যাওয়া মানুষগুলোর কথা ভুলে যায়নি সে। পরবর্তীতে সেই দুঃসহ বেদনার দিনগুলোর ছায়া অবলম্বন করে রচনা করে ছোটগল্প 'গ্রেভ অব দ্যা ফায়ারফ্লাইস্' বা 'জোনাকিদের কবর'। এই লেখক যুদ্ধ আর যুদ্ধশিশুদের নিয়ে লেখার জন্য বেশ বিখ্যাত ছিলেন। 'গ্রেভ অব দ্যা ফায়ারফ্লাইস্' নামের ছোটগল্পটাই পরে অ্যানিমেটেড মুভী (অ্যানিম) আকারে প্রকাশ হলে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাড়া পায় আর এই গল্প নিয়েই মানুষজনের (বিশেষ করে অ্যানিম প্রিয় শিশু-কিশোরদের) এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
'Saving Private Ryan','Band of Brothers','The Pacific','The Thin Red Line','The Big Red One','The Bridge'-সহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে নির্মিত মুভী বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন তুলে। এগুলো শুধুই মুভী বললে ভুল হবে, নতুন প্রজন্মের কাছে যুদ্ধের ব্যাপক ভয়াবহতা তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে, দেশভাগ নিয়ে প্রচুর বই আছে। সবগুলো উল্লেখ না করলেও শুধু ওপার বাংলার নামী-দামী লেখকদের অনেক গল্প-উপন্যাসই বয়ে বেড়ায় দেশভাগের কষ্টের তীব্র হাহাকার। 'মেঘে ঢাকা তারা', 'শঙ্খচিল' আর হালের 'রাজকাহিনী'-র মতো চলচিত্রগুলো মূল পটভূমিই তো ১৯৪৭-এর দেশভাগ। মজার ব্যাপার হলো ইন্ডিয়ার কিছু মুভীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের অংশ হিসেবে!
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচুর বই রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধারা লিখে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে রেফারেন্স বইয়েরও অভাব নেই। এক জাহানারা ইমামের 'একাত্তরের দিনগুলি' বইয়েই ঢাকা শহরে যুদ্ধের ভয়াবহতা আর পাকি আর্মি শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতনের বর্ণনা আছে। যুদ্ধের ময়দানে বসে লেখা আনোয়ার পাশার উপন্যাস 'রাইফেল, রোটি, আওরাত' আছে। নীলিমা ইব্রাহিমের 'আমি বীরঙ্গনা বলছি', মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়ার 'জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা'-তে আছে যুদ্ধে তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, সম্মুখ সমরযুদ্ধের বর্ণনা নিয়ে কম করে হলেও হাজার খানেকের উপর বই আছে। মুক্তিযুদ্ধের অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় এসেছে ওইসময়কার পাকিস্থানপন্থী রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের কর্মকান্ডের বর্ণনা। আমরা এ প্রজন্মের অনেকের মুক্তিযুদ্ধের গল্প প্রথম পড়া হয় হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর আনিসুল হকদের বই দিয়ে। মুনতাসির মামুন আর অমি রহমান পিয়ালরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদম নগদে বাঁচিয়ে রাখার কাজ করছে এখনো। এক কথায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প আর ইতিহাস বইয়ের ভান্ডার অনেক সমৃদ্ধ।
আমাদের দেশের চলচিত্র নির্মাতারা নাকি ভালো গল্প পায় না। ভালো গল্পের অভাবে নাদুস-নুদুস একঘেয়ে প্রেমের বস্তাপঁচা মুভী বানাতে নাকি বাধ্য হয়। তার উপর আছে ইন্ডিয়ান মুভীর গল্প চুরি করে বাংলা ছবি বানানোর হিড়িক। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে 'ওরা এগারো জন', 'আমার বন্ধু রাশেদ' বা 'গেরিলা'-র মতো হাতে গোণা কয়েকটা চলচিত্র ছাড়া তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ছবি তৈরী হয়নি। ওপার বাংলায় যেখানে ইতিহাস আর উপন্যাস অবলম্বনে বছরে কম করে হলেও নয়-দশটা ভালো মুভী তৈরী হয় সেখানে আমাদের চলচিত্রকাররা গল্প খুঁজে পায় না।
জাতি হিসেবে মোটা দাগে ইতিহাসের বইয়ে লিখে রাখার মতো বৃটিশ শাসন বিরোধী আন্দোলন, দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅদ্ভূত্থান, ১৯৭১'এর মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ে এরশাদ বিরোধী তীব্র ছাত্র-আন্দোলন রয়েছে। ওসব আন্দোলনে ঝরে গেছে অনেক প্রাণ, নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। ওসব পরিবার নিয়ে কি ভালো গল্প হয় না? মন ছুঁয়ে যাওয়া কাহিনী কি নেই?!
আমার এক পিচ্ছি কাজিন প্রাইমারী লেভেলে টার্ম পরীক্ষা দিচ্ছিলো। পাশের সিটে বসা এক ছেলে ওর খাতায় যা ছিলো সব হুবুহু লিখে দিয়েছে। পরীক্ষার কপি পরে যখন শিক্ষিকা ডিসস্ট্রিবিউট করছিলো তখন দেখে আমার কাজিনের নামের কপি দুইটা! যে ছেলে কপি করছিলো সে খাতায় নিজের নাম-রোলও কপি করে দিয়েছে।
আমাদের মিডিয়ায় ইন্ডিয়ার সবকিছুই অন্ধের মতো কপি করার প্রবণতা আছে। সিরিয়াল, মিউজিক ভিডিও, টিভিসি, মুভী সবই। নিজস্বতার জায়গাটা হারিয়ে ফেলেছে। ইন্ডিয়ান মিডিয়ায় যেভাবে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসের কৃতিত্বতে ভাগ বসানোর প্রবণতা আছে, তাতে না জানি আমাদের মিডিয়াও পরীক্ষার খাতায় অন্যের নাম-রোলসহ কপি করার মতো নিজেদের কৃতিত্ব ইন্ডিয়ানদের দিয়ে বসে!
আর বইবিমুখ নয়া প্রজন্মের জন্য কি 'গ্রেভ অব দ্যা ফায়ারফ্লাইস্' এর মতো আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা গল্পগুলো থেকে মুভী বানানো যায় না?
তাতে অন্তত কোন পাকিস্থানপন্থী রাজাকারগুলোর ছড়ানো মিথ্যের শিকড় আস্তে আস্তে নয়াপ্রজন্মকে গ্রাস করা থেকে দূরে রাখতে পারবে। শিশু-কিশোররাও মুভী-অ্যানিমেশন দেখে আগ্রহী হবে দেশের ইতিহাস জানতে।
'Saving Private Ryan','Band of Brothers','The Pacific','The Thin Red Line','The Big Red One','The Bridge'-সহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে নির্মিত মুভী বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন তুলে। এগুলো শুধুই মুভী বললে ভুল হবে, নতুন প্রজন্মের কাছে যুদ্ধের ব্যাপক ভয়াবহতা তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে, দেশভাগ নিয়ে প্রচুর বই আছে। সবগুলো উল্লেখ না করলেও শুধু ওপার বাংলার নামী-দামী লেখকদের অনেক গল্প-উপন্যাসই বয়ে বেড়ায় দেশভাগের কষ্টের তীব্র হাহাকার। 'মেঘে ঢাকা তারা', 'শঙ্খচিল' আর হালের 'রাজকাহিনী'-র মতো চলচিত্রগুলো মূল পটভূমিই তো ১৯৪৭-এর দেশভাগ। মজার ব্যাপার হলো ইন্ডিয়ার কিছু মুভীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে উপস্থাপন করা হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের অংশ হিসেবে!
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচুর বই রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধারা লিখে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে রেফারেন্স বইয়েরও অভাব নেই। এক জাহানারা ইমামের 'একাত্তরের দিনগুলি' বইয়েই ঢাকা শহরে যুদ্ধের ভয়াবহতা আর পাকি আর্মি শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতনের বর্ণনা আছে। যুদ্ধের ময়দানে বসে লেখা আনোয়ার পাশার উপন্যাস 'রাইফেল, রোটি, আওরাত' আছে। নীলিমা ইব্রাহিমের 'আমি বীরঙ্গনা বলছি', মেজর কামরুল হাসান ভূঁইয়ার 'জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা'-তে আছে যুদ্ধে তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, সম্মুখ সমরযুদ্ধের বর্ণনা নিয়ে কম করে হলেও হাজার খানেকের উপর বই আছে। মুক্তিযুদ্ধের অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় এসেছে ওইসময়কার পাকিস্থানপন্থী রাজাকার, আল বদর, আল শামসদের কর্মকান্ডের বর্ণনা। আমরা এ প্রজন্মের অনেকের মুক্তিযুদ্ধের গল্প প্রথম পড়া হয় হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল আর আনিসুল হকদের বই দিয়ে। মুনতাসির মামুন আর অমি রহমান পিয়ালরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস একদম নগদে বাঁচিয়ে রাখার কাজ করছে এখনো। এক কথায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প আর ইতিহাস বইয়ের ভান্ডার অনেক সমৃদ্ধ।
আমাদের দেশের চলচিত্র নির্মাতারা নাকি ভালো গল্প পায় না। ভালো গল্পের অভাবে নাদুস-নুদুস একঘেয়ে প্রেমের বস্তাপঁচা মুভী বানাতে নাকি বাধ্য হয়। তার উপর আছে ইন্ডিয়ান মুভীর গল্প চুরি করে বাংলা ছবি বানানোর হিড়িক। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে 'ওরা এগারো জন', 'আমার বন্ধু রাশেদ' বা 'গেরিলা'-র মতো হাতে গোণা কয়েকটা চলচিত্র ছাড়া তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ছবি তৈরী হয়নি। ওপার বাংলায় যেখানে ইতিহাস আর উপন্যাস অবলম্বনে বছরে কম করে হলেও নয়-দশটা ভালো মুভী তৈরী হয় সেখানে আমাদের চলচিত্রকাররা গল্প খুঁজে পায় না।
জাতি হিসেবে মোটা দাগে ইতিহাসের বইয়ে লিখে রাখার মতো বৃটিশ শাসন বিরোধী আন্দোলন, দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅদ্ভূত্থান, ১৯৭১'এর মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ে এরশাদ বিরোধী তীব্র ছাত্র-আন্দোলন রয়েছে। ওসব আন্দোলনে ঝরে গেছে অনেক প্রাণ, নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। ওসব পরিবার নিয়ে কি ভালো গল্প হয় না? মন ছুঁয়ে যাওয়া কাহিনী কি নেই?!
আমার এক পিচ্ছি কাজিন প্রাইমারী লেভেলে টার্ম পরীক্ষা দিচ্ছিলো। পাশের সিটে বসা এক ছেলে ওর খাতায় যা ছিলো সব হুবুহু লিখে দিয়েছে। পরীক্ষার কপি পরে যখন শিক্ষিকা ডিসস্ট্রিবিউট করছিলো তখন দেখে আমার কাজিনের নামের কপি দুইটা! যে ছেলে কপি করছিলো সে খাতায় নিজের নাম-রোলও কপি করে দিয়েছে।
আমাদের মিডিয়ায় ইন্ডিয়ার সবকিছুই অন্ধের মতো কপি করার প্রবণতা আছে। সিরিয়াল, মিউজিক ভিডিও, টিভিসি, মুভী সবই। নিজস্বতার জায়গাটা হারিয়ে ফেলেছে। ইন্ডিয়ান মিডিয়ায় যেভাবে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসের কৃতিত্বতে ভাগ বসানোর প্রবণতা আছে, তাতে না জানি আমাদের মিডিয়াও পরীক্ষার খাতায় অন্যের নাম-রোলসহ কপি করার মতো নিজেদের কৃতিত্ব ইন্ডিয়ানদের দিয়ে বসে!
আর বইবিমুখ নয়া প্রজন্মের জন্য কি 'গ্রেভ অব দ্যা ফায়ারফ্লাইস্' এর মতো আমাদের দেশের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা গল্পগুলো থেকে মুভী বানানো যায় না?
তাতে অন্তত কোন পাকিস্থানপন্থী রাজাকারগুলোর ছড়ানো মিথ্যের শিকড় আস্তে আস্তে নয়াপ্রজন্মকে গ্রাস করা থেকে দূরে রাখতে পারবে। শিশু-কিশোররাও মুভী-অ্যানিমেশন দেখে আগ্রহী হবে দেশের ইতিহাস জানতে।