Friday, 31 July 2015

কানাই তুমি খেইড় খেলাও ক্যানে?

১.

পৃথিবীর সবচে কষ্টের কাজগুলোর একটা হল এই সুদূর উত্তরা থেকে জ্যাম ঠেলে ঠেলে নীলক্ষেত যাওয়া, আবার আসা। আর এই কষ্টের কাজটা এড়াতে কিছু বাড়তি পয়সা গেলেও অনলাইনে বই অর্ডার করে কিনে নেই। কিন্তু ঈদের ছুটি থাকায় বই ডেলিভারী বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়েই নীলক্ষেত গিয়ে কিছু বই কিনে নিয়ে এলাম গত শুক্রবার। ভাবছিলাম সোমবার থেকে মোটামুটি ফ্রি থাকবো, শুক্রবারের মধ্যেই কিছু পড়া হয়ে যাবে আর অবসরটাও ভালই কাটবে। কিন্তু যেমন ভাবনা তেমনভাবে কি দুনিয়া চলে? কিছুই হয়নি। 'ক্রাচের কর্নেল' শুরু করেও বেশীদূর যেতে পারিনি এখনো। তবে বেশ ভালো লাগছে বইটা, যদিও উপন্যাসটার মূল পরিণতি মানে কর্ণেল তাহেরে ফাঁসি হয়ে যাবে শেষে জানি তবুও বইটা পড়ে অনেক তথ্যই জানতে পারছি। ওহ্.. এটা উপন্যাস কি না এ নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। রিভিউ জানতে গিয়েই ফেসবুকে বইপোকা গ্রুপে তুমুল বিতর্ক দেখলাম। বইয়ের লেখক সাহাদুজ্জামান আদৌ কোন উপন্যাসিক কিনা এ নিয়ে কিংবা সে মূলত ছোটগল্পকার - এসব নিয়ে বিতর্ক দেখে বইটা পড়ার উৎসাহ অনেকাংশেই বেড়ে গিয়েছিলো। তবে বইটা পড়া আমার কাছে সরাসরি না দেখা কোন বিখ্যাত ফুটবল ম্যাচের রিটেলিকাস্ট দেখছি, যার ফলাফল আগের থেকেই জানি।


২.

গত কিছুদিন ধরেই হুটহাট অনেকের সাথে পরিচয় হচ্ছে। ব্যাপারটা অনেকদিন ধরে হচ্ছিলো না। ভার্সিটিতে ভর্তির পর টানা দেড়-দুই বছর অনেক অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, অনেকের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়েছে, অনেকের সাথে হাই-হ্যালো সম্পর্ক আর কারো কারো সাথে মনকষাকষিতে সম্পর্কই ভেঙ্গে গেছে - এমনটা সচরাচর হয় আরকি। রিভার সাথে পরিচয় কবে ঠিক মনে নেই, তবে আমাদের টিনএজের শেষের দিকে যখন মিগ৩৩ বা মিগ থার্টি থ্রি খুব জনপ্রিয় ছিলো মোবাইলে চ্যাটিং সফটওয়্যার হিসেবে তখন রঙ্গের মেলা নামে গ্রুপে। ফেসবুকেও ছিলো তখন থেকেই তবে লাইক-কমেন্টের বাইরে 'টুঁ' শব্দটাও চ্যাট হয়নি এমন আরকি। তো হঠাৎ করে কয়েকমাস আগে চ্যাট হলো, তাও খুব সম্ভবত শুক্রবার জুম্মার নামাজের টাইমে স্ট্যাটাস আপডেট করায় নামাজ পড়ি কিনা জিজ্ঞেস করেছিলো। তো যা হবার, কথায় কথায় এখন তুই তোকারি করে পচায় আরকি যে কিনা তিন-চার বছর ধরে আপনি-তুমির বাইরে সম্ভোধন করেনি। এ জন্যই বোধহয় জীবনের নাম 'গেবন' হয়ে গেছে!


৩.

কোন এক অদ্ভূত কারণে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপারে কিছু অবিশ্বাস্য মিথ চালু আছে। যেমন 'তারা কিছু পড়া লাগে না - এমনি এমনি ভাল গ্রেড পায়', 'টাকা দিয়ে পড়ে তাই এদের না পড়লেও রেজাল্ট ভালো হয়', 'এরা কিছু পারে না খামোখাই ভাব মারে', 'এরা ভার্সিটিতে গিয়ে আড্ডা মারে-এখানে ওখানে খেতে যায় আর সেলফি তোলে আপলোড মারে.. এরা কি ক্লাসে যায় নাকি কখনো? পড়ালেখা তো দূরের ব্যাপার।'  ইত্যাদি ইত্যাদি। তো আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে কষে থাপ্পর মারি এমন কথা বলা কিছু মানুষকে। এরা দু-একজনের লাইফস্টাইল দেখে সহজ সমীকরণ দিয়ে বখাইট্টা যুক্তি দেখান যে 'অমুক এটা করে, অতএব অমুকের ভার্সিটির সবাই এটাই করে'! বিশেষ করে থাপরাইতে ইচ্ছে করে যখন অনেক কষ্টে খেঁটে মেটে প্রোজেক্ট, আসাইনমেন্ট, পরীক্ষা সব ঠিকভাবে দেয়ার পরও এ-এ মাইনাস ছুটে যায় তখন। ঈদের ছুটিতে এ টাইপের কথাবার্তা শুনে গতকিছুদিন ধরেই মিস্টার মেজাজ আর তার 'বরফ স্টেট' থেকে উওপ্ত উনুনে জ্বলছে। যাই হোক, পলিটিক্যাল সাইন্স কোর্সের ইনস্ট্রাক্টর এক আমেরিকান ভদ্রমহিলা (এবং পলিটিশিয়ান)। সত্যি বলতে এ কোর্সের মতো মজার কোর্স আমি আমার ইহজগতে কম করছি। মঙ্গলবার ছিলো গ্রুপ প্রেজেন্টেশন। প্রেজেন্টেশন টপিক ছিলো সার্ক। আর আমাদের গ্রুপ রবিবার পর্যন্ত কোন কাজই করিনি। আমাদের গ্রুপের নাম 'মিশন ইম্পসিবল'। তো সোমবার মিড দিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বিকেলে উঠে শুরু করলাম কাজ, ইম্পসিবল মিশনকে পসিবল করে পরের দিনের জন্য প্রেজেন্টেশন স্লাইড রেডী করা। ত্রিশ মিনিটের প্রেজেন্টশন, অতএব পাঁচজনকে সর্বনিন্ম পাঁচ মিনিট তো প্রেজেন্ট করতেই হবে। সে হিসেবে ডকুমেন্ট আর সাইট ঘেঁটে অনেক তথ্য বের করে বানাতে লাগলাম। আমার পার্ট শেষ করে গ্রুপমেটদের অবস্থা দেখলাম। ভার্সিটির গ্রুপ ওয়ার্ক মানে পাঁচজনের একজন বা দুজন কাজ করা আর বাকীরা লাট সাহেবের মতো পায়ের উপর পা তুলে ঘুম প্র্যাকটিস করা। কিন্তু বিস্ময়করভাবে এই কোর্সের গ্রুপটায় মোটামুটি সবাই অ্যাকটিভ, তাই কাজ করতে ভালই লাগে। সবাই রাত একটার মধ্যে যার যার পার্টের কাজ পাঠিয়ে দিলো, আর আমি সবগুলো জোড়া লাগিয়ে পাওয়ার পয়েন্টে দাঁড় করাতে রাত প্রায় চারটা হয়ে গেল। পরদিন সকাল সাড়ে নয়টা প্রেজেন্টেশন! দুচোখের অভিমান ভাঙ্গাতে ঘুমুতে গেলাম সাড়ে পাঁচটায়!


৪.

রাতে বারোটার দিকে রিভা নক দিলো ফেসবুকে, 'দোস্ত, বাসায় আসলাম'। আগেরদিন রিভার আম্মু রাস্তার গর্তে পড়ে পা ভেঙ্গে গেছে। পঙ্গু হাসপাতালে রয়েছে। ঢাকা শহরে বিনা নোটিসে বৃষ্টির মাঝে যেমন অলি-গলি সব তলিয়ে যায় হুট করে ঠিক তেমনি মানুষের হাত-পা ভাঙ্গার কোন ঠিক ঠিকানা নেই আসলে। আমি নিজেই এক বছরের ব্যাবধানে পা-হাত ভেঙ্গেছিলাম দুবছর আগে। আহা, সে কি যন্ত্রণা! একটু পর রাশেদ নক দিয়ে বলে, 'ভাই নার্ভাস লাগছে। কাল প্রেজেন্টেশনে কি বলবো বুঝতেছিনা!' আমি হাসি, আরে মিয়া যা মুখে আসে বলে দিবা। বিদেশী ফ্যাকাল্টি মেম্বার, ভালো আছে মানুষটা!

রাশেদ ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট। পলিটিকাল সাইন্সে আমার গ্রুপমেট। হাসিখুশি মানুষ, অল্প কদিনেই বেশ ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে। দেখামাত্রই একটা হাসি বরাদ্দ আছে, আর বলে, 'মিয়া কোর্সে তো ফাঁটাবা.. আমি তো পলিটিক্স কম বুঝি.. কি যে হবে..' বলেই আবার হাসি! দেশের বাড়ী রাঙ্গামাটি আর পরিবারসহ থাকে উত্তরায়। আগেরদিনই ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় এলো। তো রাতে আবার প্রেজেন্টেশন স্লাইড রেডি করার শেষের দিকে আমিই নক দিলাম, ও বলে.. 'ভাই.. কি যে হবে কাল! প্রেজেন্টেশন যে কি দিবো' লিখেই দুজনের ইমোটিকন বিনিময়.. হাহা-হিহি!



৫.

দেড় ঘন্টার ছোটখাটো ঘুম দিয়ে সকালে বাসা থেকে বের হতে হতেই সাড়ে সাতটা বেজে গেলো। রাজলক্ষী পৌঁছাতেই রাশেদের ফোন। হ্যালো বলার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে রাশেদের গলাটা রাশভারী মনে হলো। ফুরফুরে মেজাজের কোন ছোঁয়াও নেই গলায়। বললো, তার বাবা খুব অসুস্থ, চিটাগাং-এ হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে.. অবস্থা সুবিধার না। চিটাগাং যাচ্ছে ও, ম্যাডামকে যেন জানাই ওর ব্যাপারটা। ও যখন বললো অবস্থা সুবিধার না তখন বুকের ভের ধক্ করে উঠলো। আমার ঠিক ছয় বছর আগের কথা মনে পড়লো। ২৬ মে, ২০০৯। আসলে ঘুরে ফিরে বোধহয় সবাইকে এমন দিন ফেইস করতে হয়, তবু দোয়া করছিলাম আমার মতো পরিণতি যাতে তার এখনই না দেখতে হয়।


৬.

প্রেজেন্টেশন বেশ ভালোই হলো, আর ম্যাডাম-ও খুশী হলো। প্রেজেন্টেশনের শেষে সার্ক অ্যানথিমটার ভিডিও প্লে করলাম, ম্যাডাম উপমহাদেশীয় নাচ-গান আর বিভিন্ন জায়গার উপর করা দেড় মিনিটের ভিডিওটা বেশ পছন্দ করলেন। ওদিন আর কোন ক্লাস না থাকায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরছিলাম। বদ-অভ্যাসবসত বাসে বসেই মোবাইল গুতানো শুরু করলাম, ফেবু হোমপেইজে দেখি রাশেদকে ট্যাগ করে ওর কোন এক বন্ধু স্ট্যাটাস পোষ্ট করেছে। স্পষ্ট করে লেখা না থাকলেও যা বুঝলাম তার মানে দাঁড়াচ্ছে রাশেদের বাবা বোধহয় ওপারেই পাড়ি জমিয়েছেন। মানে আমর ২৬ মে-টা বোধহয় রাশেদের জন্য ২৮ জুলাই এলো। ঘুমিয়ে পড়লাম দুপুরে, রাতে ঘুম থেকে উঠে ওর টাইমলাইনে গিয়ে দেখলাম অনেকেই পোষ্ট করেছে। মানে যা ভাবছিলাম তা-ই! হাত পা ভাঙ্গা বোধহয় অনেক ভালো, তবে এমন হুটহাট মৃত্যুদূত এসে জলজ্যান্ত একটা মানুষকে ওপারে নিয়ে চলে যাওয়া সত্যিই বড় কষ্টের। পৃথিবীর একটা অদ্ভূত ব্যাপার হলো এক জায়গায় ভূমিকম্প হয়ে ভেঙ্গে-চুরে গেলেও বাকী পৃথিবীর কিছুই হয় না। ঠিক তেমনই কারো আপনজন চলে গেলে তার বুকের ভেতরের ভূমিকম্পটা বোধহয় পৃথিবীর অন্য মানুষরা টের পায় না। শুধু ধ্বংসাবশেষই দেখতে পায়। ভূমিকম্প এবার আমার ভেতরটায় হয়নি, তবে জানি রাশেদের ভেতরে ঠিক কতটা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে!

"কানাই তুমি খেইড় খেলাও ক্যানে?"

ভোর ৪টা ৪৪
৩‌১ জুলাই, ২০১৫
উত্তরা।

Tuesday, 28 April 2015

যাচ্ছে না এড়ানো..

একদিন হুট করে ওপারে চলে যেতে হবে - এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কত দেখলাম, কতো আসলো অার কতো গেলো। যাবার আগে একবার ডেকে বলেনি, যাইরে.. ভালো থাকিস!

ভালো নেই বলবো না, ভালোই আছি। হুটহাট যেতে হবে তাই মৃত্যু চিন্তার বাড়াবাড়ি নেই। কুইন্সের এক খুনি ছেলের অনুশোচনা নিয়ে বানানো বহেমিয়ান রাপ্সোডি গানটা শুনছিলাম তানভীরের পাশে শুয়ে। হুট করে বুক দড়ফড় করে উঠলো, হাত-পা কাঁপছিলো। 'কাগু, আমার বুকে ব্যাথা বাড়ছে বোধহয় অাবার। কেমন যেন হাত-পাও কাঁপছে!'-বলে শেষ করার আগেই ও বললো, 'আরে আমার-ও তো!'

ভূমিকম্প হয়েছিলো আসলে। মুহুর্তেই নেপালে এতকিছু গুড়িয়ে গেলো, কতজন ওপারে চলে গেলো! সব জানতে পারলাম ঘন্টাখানেক পর। দেশটা নেপাল না হয়ে বাংলাদেশ হতে পারতো, কাঠমুন্ডু-পোখারা না হয়ে শহরগুলো ঢাকা-চট্টগ্রামও হতে পারতো। মৃত মানুষগুলো থাপা-প্যাটেল না হয়ে রহমান-হোসেনও হতে পারতো। হতে পারতো অনেক কিছুই, হয়নি এজন্য শুকরিয়া। হয়নি তাই ফেসবুকে সেইফটি চেকে সেইফ দেয়া নিয়ে অাবাল-পন্ডিত খেলা দেখছি, ভূমিকম্প নিয়ে কৌতুক দেখছি! স্রষ্টাও রসিক, রসিকদের মতো উপর থেকে হাসে। কিচ্ছু বলে না।

তবুও একে একে চলে যাচ্ছে অনেকে। সম্পর্ক চুকে বেঁচে আছে কেউ কেউ, আছে কষ্টের তীব্র যন্ত্রণা নিয়েই। তবে কিছু কিছু জিনিস থেকে যাচ্ছে চিরতরে।

অঞ্জনের ভাষাতেই বলিঃ
'যাচ্ছে না এড়ানো শেষ শুয়ে পড়াটা। যাচ্ছে না থামানো শেষ কাঁধে চড়াটা, যাচ্ছে না জাগানো শ্মশানের মরাটাকে। যাচ্ছে না তাই সে কোথাও।'

**প্রিয় নেপাল, শেষ বলে কিছু নেই। শেষ যেখানে, জেনো শুরু সেখানেই।জেগে উঠো হিমালয়কন্যা।**‪
#‎PrayForNepal ‪#‎SaveNepal


রাত ০২:১৮
২৭.০৪.২০১৫
উত্তরা, ঢাকা

Monday, 16 March 2015

Bye!

Everything has to come to an end, one way or another. Some ends are joyful and others are sorrowful. It wasn't like any other regular days. I slept till 3.30 pm today and then went to my student's home at 4.40 but i was 40 minutes late. I taught my student till 5.30 pm. In a while during my teaching, my student's mom entered the room and had started talking about some issues of student's progress. After the conversation ended, student understood that today was going to be the last day there to teach him. Afterward, I had told him to write a question answer. He wrote and put his head down on the table.

After checking his copy I was shocked to discover that he is crying silently! I asked why he was crying.. but he didn't reply and refused to move his head! I was a really surprised because that student was the most naughty student of my tutor life! Usually he refused to listen to me till I get angry. I had to slap him few times (I was given the permission to slap him BTW)! I never thought he would have a soft corner for me! I had to get out from the emotional situation somehow so when I was leaving his room I said, 'accha jai tahole.. good bye.'


he stood up and replied, 'Sir, Apni ki shotti shotti aar kokhono e amake porate ashben na?!'


Love hurts.. even in student-teacher relationship! :(

***
13th November, 2014
Uttara, Dhaka 

মানুষ বোঝ না!

প্রথম আলো-সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের হেডলাইন হলো ব্লগার অভিজিত রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আসলেই কি তিনি শুধু ব্লগার? অবশ্য বাংলানিউজ আর বিডিনিউজে পরিচয় দিয়েছে লেখক অভিজিত রায় হিসেবে।

আসলে মিডিয়া পাবলিককে খাওয়ানোও মতো করে নিউজ প্রেজেন্ট করে যাতে পাবলিক হেডলাইন পড়ার পর বাকীটা পড়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার যে নিউজের হেডলাইনে ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলাতে খুব সহজে বেশীর ভাগ পাঠকই ধরে নিবে লোকটা নাস্তিক হবে। অতএব, দুই-একটা নাস্তিক মারা দেশ ও জাতির জন্য সুসংবাদ।

গত দু'বছর হেফাজতের নিউজ করতে করতে মিডিয়া এখন ব্লগার মানেই নাস্তিক এমন একটা নেগেটিভ সেন্স তৈরী করে ফেলেছে (এর মানে আমি বলছি না অভিজিত রায় নাস্তিক ছিলেন না)। অনেকের কাছেই নাস্তিক হত্যা কতটুকু হালাল সেটা কেউ বোঝার দরকার পড়বে না। বরং ব্লগারদের গালাগাল করে একচোট দেখে নিবে। ব্যাপার এমন, একটা দুইটা নাস্তিক ধরো, ধইরা ধইরা জবাই করো!

মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা বা ব্লগার পরিচয়ের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাবে অভিজিত রায়ের লেখক পরিচয়। মানুষ জানবে সে শুধু ধর্মের বিরুদ্ধে বিশেষত ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে লিখেছে। এ নিয়ে কাল থেকে বাঁশের কেল্লা বা রেডিও মুন্না টাইপের পেইজগুলো থেকে হয়তো প্রচার প্রচারণা শুরু হয়ে যাবে নাস্তেক জালেম অভিজিত রায়কে নিয়ে। মানে বিজ্ঞান নিয়েও যে মানুষটা লিখতো সে হয়ে যাবে ১০০% দেশের শত্রু। অতএব হত্যাকারীরা বাহবা পাবে।

এক্সট্রিম লেভেলের যে কোন কিছুই খারাপ। মুক্তমনার মুখোশে ইসলাম ধর্ম বা অন্য ধর্মকে খোঁচা মেরে লেখা। আবার ধর্মান্ধ সেজে যাকে তাকে ধর্মের শত্রু বলে খতম করা। তাই বলে ভিন্ন মত সহ্য না করে একদম খতম করা, গুম করে দেয়া আসলে কোন সংস্কৃতি হতে পারে না।

আরেকটা জিনিস চোখে লাগলো যেটা হলো ফেব্রুয়ারীতেই এসব নাস্তিক বা নাস্তিকতার দায়ে অভিযুক্ত লোকগুলোকে টার্গেট করে হামলা করা হয়! দু বছর আগে ফেব্রুয়ারীতেই রাজীব হায়দারকে হত্যা করা হলো, ২০০৪-এর ২৭ ফেব্রুয়ারীতে হুমায়ন আজাদকে বইমেলা প্রাঙ্গনের বাইরে কোপানো হলো.. এবার অভিজিত রায়কে!

ও.. বছরখানেক আগেই ফারাবীই অভিজিত রায়কে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এ নিয়ে তিনি একটা নোট-ও লিখেছিলেন ফেসবুকে। প্রশ্ন হলো, ফারাবি কে? ফারাবি হলো সে ব্যাক্তি যে রাজীব হায়দারের জানাজার ইমামকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলো। যদিও ব্লাগোস্ফিয়ারে ফারাবীকে তারছেঁড়া পাগলই ভাবে অনেকে।

মিডিয়ার কথা দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম। লেখকের চেয়ে ব্লগার পরিচয় বড় করে দেখা নিয়ে। এই নিউজটা নিয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ফেসবুক পেইজ হাস্যকর একটা কাজ করে বসেছে। অভিজিত রায়ের মৃত্যুসংবাদের নিচে আমার এক সাবেক সহপাঠী ও বন্ধুর (যার নামও অভিজিত রায়) ছবি ছাপিয়ে দিয়েছে। (লিংকঃ http://on.fb.me/1wsxuL8 ) গরম গরম সংবাদ দিতে গিয়ে গুগলের সাহায্য নিয়ে এই অবস্থা। :3

এরপর আর কিছু বলার থাকে না!সব কথার শেষ কথা হলো, এই দেশে সবাই এক্সট্রিমিস্ট! সবাই বেশী বোঝে! এক্সট্রিমিস্টদের কর্মকান্ডের বিচার এদেশে হয় না, হোক সে পেট্রোল বোমাবাজ, হোক সে গুম-খুনরাজ আর হোক সে অন্য কিছু!

কবি হেলাল হাফিজের মতো করে বলি,
'নিউট্রন বোমা বোঝ
মানুষ বোঝ না!'

***
২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪
উত্তরা, ঢাকা। 

Sunday, 1 February 2015

জানুয়ারী '১৫-তে পড়া বইগুলো

বছরের অন্য সময়ের তুলনায় জানুয়ারীতে সবসময়ই অবসরটা বেশী থাকে। এ অবসরে কিছু চমৎকার বই পড়েছি। নিচে সেগুলো নিয়েই লিখছি।


 One night @ the call center by Chetan Bhagat

Shyam Mehra ও কল সেন্টারে তার ৫ কলিগকে নিয়ে ঘটে যাওয়া একটি রাতের ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস। যেখানে তাদের ফোন করে স্বয়ং ঈশ্বর! বরাবরের মতোই চেতন ভাগাত তার লেখা উত্তম পুরুষ বা ফার্স্ট পার্সনে লিখেছেন আর সব গল্পের মতই এ গল্পও যুবসমাজকে প্রাধান্য দিয়ে (এ পর্যন্ত প্রত্যেক গল্পই young age-এর ছেলে-মেয়েদের নিয়েই লিখেছেন!)।

রাতের শিফটে কল সেন্টারে কাজ শুরুর আগ থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক ঘন্টার বর্ণনা আর পাশাপাশি Shayam এর সাথে তার এক্স-গার্লফ্রেন্ড ও বর্তমান কলিগ Priyanka-র স্মৃতিচারণ খুব সুন্দরভাবে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন। আমার ধারণা দুটো কারণে চেতন ভাগাতের লেখা পাঠক এতো পছন্দ করে। এক, অতীতের ঘটনাগুলো সুনিপুণভাবে লেখনীতে তুলে ধরা আর দুই, চমৎকার সেন্স অব হিউমর।





রাইফেল, রোটি, আওরাত - আনোয়ার পাশা 

অনেকদিন ধরে পড়বো পড়বো করে পড়া হয়নি বইটি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর তৎসংলগ্ন এলাকাগুলোর একটা চিত্র এ বইয়ে লেখক তুলে ধরেছেন। লেখক আনোয়ার পাশাকে নিয়ে আলাদা করে বলতে হয় যিনি ছিলেন মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং পাশাপাশি একজন লেখক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন এবং রণাঙ্গণ থেকে এই বিখ্যাত উপন্যাসটি লিখেন। লেখক আনোয়ার পাশা আল বদরদের হাতে ১৪ ডিসেম্বর অপহৃত হয়ে পরে নিহত হন। তবে থেকে গেছে তার কালজয়ী উপন্যাসটি। খুব সম্ভবত একাত্তরের রণাঙ্গণ থেকে লেখা একমাত্র উপন্যাস এটি।

এ উপন্যাসের নায়কও লেখকের মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তবে ইংরেজী বিভাগের। নাম তার সুদীপ্ত শাহিন। অফিসিয়াল নাম নয়, পাকিস্থান আমলে এ নাম হিন্দুয়ানি বলে বিবেচিত হতো বলে এফিডেটিভ করে অন্য নামে শিক্ষকতা করতো। উপন্যাসের শুরুতেই ২৫শে মার্চের কালরাতে গণহত্যার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকাগুলোতে বসবাসকারীদের করুণ পরিণতি বর্ণনায় আসে। সত্যি বলতে কি, শিক্ষকদের বাসায়-সিড়িতে লাশ আর রক্তের বর্ণনা, পাক হানাদাররা ছাত্রদের গুলি করে মেরে ফেলে যাওয়ার পরের বর্ণনাগুলো এত বছর পরে পড়েও আমার গায়ের রোম শিউরে উঠেছে। জামাত আর নেজামে ইসলামীর কর্মীদের দালালীর চিত্র আর বিহারীদের মারমুখী আচরণও গল্পের মধ্যে তুলে ধরেছেন লেখক। যুদ্ধের শুরুতে কোণাঠাসা দুটো পরিবার আশ্রয়ের খোঁজে ঢাকা শহরে এদিক-সেদিক করে বিভিন্ন মানুষের বাসা বাড়ীতে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনা হৃদয়ে দাগ কাটার মতো করেই বর্ণনা করেছেন লেখক। আগ্রহী পাঠকরা এই বইয়ে চড়ে একাত্তরের টাইম লাইনে ঘুরে আসতে পারেন।





The 3 mistakes of my life by Chetan Bhagat

ব্যবসা, ক্রিকেট আর ধর্ম - এ তিনটি জিনিসকে নিয়ে বেড়ে ওঠা তিন যুবক বন্ধুর গল্প The 3 mistakes of my life. বরাবরের মতই চেতন ভাগাত একজনকে বেছে নিয়েছেন ঘটনার বর্ণনা করতে। লেখক IIM আহমেদাবাদে পড়ার সুবাদে গুজরাটে থেকেছেন, তাই গুজরাটিদের রক্তে মিশে থাকা ব্যবসা আর কিছু হিন্দু মৌলবাদী ধর্মের প্রতি অন্ধত্বটাকেও তুলে ধরেছেন। গল্পের এক পর্যায়ে ২০০১ সালে গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার চিত্রটাও তুলে ধরেছেন বেশ নিপুণভাবে যেখানে গল্পের একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মৃত্যু হয়।

গোবিন্দ এবং তার দুই বন্ধু ইশান্ত ও অমি। গোবিন্দ অংকে খুবই ভালো, পাবলিক পরীক্ষায় গণিতে রেকর্ড পরিমাণ মার্কস্ তুলে এলাকায় বিখ্যাত হয়েছে। পিতা পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়ার পর মায়ের সাথে সংসার সামলাচ্ছে টিউশন করে। তার মা পিঠা বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ডেলিভারী দিয়ে দু'জনের পরিবারের আয় রোজগার করছে। ইশান্ত মোটামুটি অবস্থা সম্পন্ন, তবে পিতার ইচ্ছেমত মিলেটারীতে চাকরী করা হয়নি তার। কিশোর বয়সে জেলা টীমে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়ে বেশ নামডাক হয়েছে। আর অমি মন্দিরের সেবকের ছেলে। সে গাধা টাইপের এবং ধর্মের প্রতি ব্যাপক দুর্বলতা রয়েছে তার। তিনবন্ধু মিলে ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যবসা শুরু করে আর সে অনুযায়ী গল্প এগুতে থাকে। গল্পের শুরুটা হয় গোবিন্দর ইমেইল দিয়ে। আত্মহত্যার পূ্র্বে সে লেখক চেতন ভাগাতকে ইমেইল করে, আর সে ইমেইলের সূত্র ধরেই সব কিছু ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে থাকে। চেতনের অন্যতম সেরা উপন্যাস এটি। হতাশাবাদীরা অনুপ্রেরনা খুঁজে পেতে এ বইটা অবশ্যই পড়তে পারেন। :)





সাকিব আল হাসানঃ আপন চোখে ভিন্ন চোখে - দেবব্রত মুখপাধ্যায়

লেখক বা গদ্যকার দেবব্রত মুখপাধ্যায়ের লেখার জাদু নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। পেশাগত জীবনে সাংবাদিক (মূলত ক্রীড়া সাংবাদিক) দেবব্রত দা ফেসবুক কমিউনিটি ও ব্লগ জগতে বেশ বিখ্যাত একটি নাম। আমাদের দেশের সেরা খেলোয়াড়টিকে নিয়ে এই প্রথম কোন বই লেখা হলো, আর সেটা করলেন সাংবাদিক দেবব্রত দা। এখানে লেখক না বলে সাংবাদিক বলছি এ কারণেই যে, বইটিতে মূলত সাকিব সম্পর্কে লিখেছেন বা ইন্টারভিউ দিয়েছেন দেশের ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গণের বিখ্যাত খেলোয়াড়, কোচ আর সাংবাদিকরা। এত মানুষের ইন্টারভিউ জোগাড় করে এক করতে দেবব্রত দাকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে তা অবশ্য আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সাকিব শুধু বাংলাদেশের না, বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু এই সাকিব একসময় তো আজকের এই সাকিব ছিলেন না, ছিলেন ফয়সাল। কিন্তু ওই ফয়সাল কিভাবে আজকের এই সাকিব হয়ে উঠলেন তা জানতে অবশ্যই বইটা পড়া উচিত। সাকিবের মা, বাবা, বোন, ছোটবেলার বন্ধু, স্ত্রী আর কোচ থেকে শুরু করে বর্তমানের সহখেলোয়াড় - সবাই সাকিব সম্পর্কে বলেছেন। সত্যি বলতে সাকিব সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য জানতে পেরেছি বইটা পড়ে। তারকা সাকিবের পেছনে একজন পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী ক্রিকেট শ্রমিককেও স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছি। একটা মানুষ এত তারকাখ্যাতি পাবার পরও কিভাবে তার মূল ফোকাসটা সেই ছোটবেলা থেকে আজ অবদি ধরে রেখেছে তা-ও জেনেছি এ বই পড়ে।

যারা এদেশে থেকে সাধারণের কাতার থেকে অসাধারণের কাতারে যেতে চায় তাদের জন্য বোধকরি 'মাস্ট রিড' বই এটি।


2 States by Chetan Bhagat 

অনেকগুলো রাজ্য নিয়ে ভারত রাষ্ট্র গঠিত হলেও রাজ্যগুলোর মানুষরা মানসিক আর সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে আজও তারা একটি একক জনগোষ্ঠী হয়ে উঠতে পারেনি। সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে নিজের গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে হিমশিম খাওয়া লেখক চেতন ভাগাত একেবারে নিজের জীবনের কাহিনী নিয়ে কলম ধরেছেন পাঞ্জাবী আর তামিল জনগোষ্ঠী তথা নর্থ আর সাউথ ইন্ডিয়ান সমাজের অসামাঞ্জস্ব্যতাগুলো গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরতে।

IIM-A তে পড়তে গিয়ে পাঞ্জাবী বংশদ্ভূত দিল্লীর অধিবাসী কৃশের সাথে পরিচয় তামিল নাড়ুর অনন্যার সাথে। সেখানেই প্রেম, দুই বছর একসাথে পড়াশোনা তারপর দুজনের দু্টো ব্যাংকে চাকরী। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও পারিবারিক অপছন্দের কারণে কেউই কাউকে বিয়ে করতে পারছিলেন না আর দুজনই পরিবারের অসম্মতিতে পালিয়ে বিয়ে করার বিরোধী। যাই হোক, সাংস্কৃতিক দ্বন্দের ইতি টেনে তারা কিভাবে কাছে এসেছিলেন আর কতো ঝড় এর মাঝে বয়ে গেছে তা জানতে অবশ্যই বইটা পড়তে পারেন। একই রাষ্ট্রে থেকেও কখন দুটো পরিবারের কাছে রাষ্ট্রের চেয়ে নিজ রাজ্য কেনো বড় হয়ে গিয়েছিলো তা বুঝতে এ উপন্যাস একটা ভালো অপশন। আট-দশটা লুতুপুতু প্রেমের কাহিনী নয়, বলা যায় সলিড প্রেমের কাহিনী এই 2 States। তবে এর ফাঁকে বলে রাখি, এই  উপন্যাসকে কেন্দ্র করে তৈরী করা বলিউডের মুভী 2 States দেখে আমি যারপরনাই হতাশ হয়েছি। মুভী দেখে কেউ এই উপন্যাসকে বিচার করতে গেলে লেখকের প্রতি চরম অবিচার হয়ে যাবে।


এগুলো ছাড়াও জানুয়ারীতে আরো কিছু বই পড়তে ধরে আর শেষ করে ওঠা হয়নি। এর মাঝে চেতন ভাগাতের কলাম সমগ্র What Young India Wants আর পাওলো কোয়েলহো'র The Alchemist অসমাপ্ত পড়া অবস্থায় রয়েছে। ধন্যবাদ।  :)  


Thursday, 22 January 2015

প্রিয় ১০টি বই

যদিও আমি সচেতন পাঠক নই, বাছবিচার না করেই বই পড়ি। তবুও ১০টা প্রিয় বইয়ের লিস্ট করতে গিয়ে বেশ বিপদে পড়ে গিয়েছি। আমার ধারণা পাঠক হিসেবে আমার রুচি বেশ নিম্নমানের। আমার ভাললাগা ১০টি বইয়ের নাম দেখে যে কেউই আমার ধারণার সাথে একমত হওয়ার অনেকগুলো কারণ পাবেন। যাই হোক, প্রিয়/ভাল লাগা দশটি বইয়ের নাম হলঃ

১) যে জলে আগুন জ্বলে - হেলাল হাফিজ 
(অনেকগুলো প্রিয় কবিতা এক বইতে!)
২) কবি - হুমায়ূন আহমেদ 
(আমার সবচে ভাল লাগা উপন্যাস এটি। অদ্ভূতভাবে উপন্যাসের আতহারের সাথে নিজের মিল খুঁজি শুধু! এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের 'অপেক্ষা'-ও খুব প্রিয়।)
৩) একাত্তরের দিনগুলি - জাহনারা ইমাম 
৪) হিমু (সিরিজ) - হুমায়ূন আহমেদ 
৫) নক্ষত্র, শাপলা, স্পাটাকাস ও ভাসান যাত্রার গল্প - অদিতি ফাল্গুনী 
(বইয়ের গল্পটা যে সময়, যে পরিবারের উপর বেস করে এগিয়েছে, সেই সময়, সেই পরিবারের মতো হুবুহু তেমনভাবে পার করে এসেছি বলেই বোধহয় ভাল লেগেছে।)
৬) বিশ্ব যখন ফুটবলময় - উৎপল শুভ্র 
(খেলা নিয়ে বই হলেও পুরো বিশ্বকাপের সময় এক শহর থেকে এক শহরে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি ফুটবল নিয়ে যে বর্ণানা দিয়েছে লেখক তা বেশ ভাল লেগেছে। এছাড়াও 'শচীন রূপকথা' বইটাও বেশ ভাল লেগেছে, মটিভেশনাল অনেক কিছু খুঁজে পেয়েছি।)
৭) বাদশাহ নামদার - হুমায়ূন আহমেদ 
৮) আনবাড়ি - লুনা রুশদী/শাগুফতা শারমিন তানিয়া
(প্রবাসজীবন নিয়ে লেখা বই। লুনা রুশদীর লেখা পার্টটা ভাল লেগেছে। সত্যি বলতে প্রবাস জীবন সম্পর্কে অনেক আইডিয়াই চেঞ্জ হয়ে গেছে। লুনা রুশদীর লেখার স্টাইল বেশ ভাল লেগেছে আমার।)
৯) আমি তপু - মুহাম্মদ জাফর ইকবাল 
১০) ঈশপের গল্প 
(ছোটবেলায় পড়া প্রিয় একটা বই।)

কোন সাইন্স ফিকশন বই নেই! আর শীর্ষেন্দু, তারাশঙ্কর, শরৎচন্দ্র, সুনীল, রবী ঠাকুর কিংবা নজরুলের বই যার লিস্টে তার পাঠকমান যে কেমন সেটা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন! :)

৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

Monday, 12 January 2015

২০১৪ সালে পড়া বইগুলো

২০১৪-তে পড়া বইগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখলাম। আরো পড়েছি সবগুলোর আগে থেকে লিপিবদ্ধ না করায় ভুলে গেছি, যা মনে আছে এখানে দিলামঃ

নংবইয়ের নামলেখকসময়
কবিহুমায়ূন আহমেদজানুয়ারী
অপেক্ষাহুমায়ূন আহমেদজানুয়ারী
বাদশাহ্ নামদারহুমায়ূন আহমেদএপ্রিল
দেয়ালহুমায়ূন আহমেদজুলাই
শাহবাগ থেকে হেফাজত : রাজসাক্ষীর জবানবন্দিজিয়া হাসানজুন
অপ্সরাআসিফ মেহদীফেব্রুয়ারী
আমারও একটা প্রেম কাহিনী আছেআনিসুল হকফেব্রুয়ারী
একাত্তর ও আমার বাবাহুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালফেব্রুয়ারী
শচীন রূপকথাউৎপল শুভ্রফেব্রুয়ারী
১০ইস্টিশনমুহম্মদ জাফর ইকবালমে
১১একাত্তরের দিনগুলিজাহানারা ইমামআগষ্ট-সেপ্টেম্বর
১২কলমরাসায়ত রহমান সেপ্টেম্বর
১৩আনবাড়িলুনা রুশদী ও সাগুফতা শারমিন তানিয়াজুন-জুলাই
১৪Half GirlfriendChetan Bhagat November-December
১৫Five Point SomeoneChetan BhagatDecember
১৬সাদাসিঁধে কথামুহম্মদ জাফর ইকবালঅক্টোবর

Saturday, 10 January 2015

ওয়ান নাইট অ্যাট দ্যা কল সেন্টার আর এক কলারের গল্প

There are four things a person needs for success.
One, a medium amount of intelligence
Two, a bit of imagination
Three, Self-confidence
and Four, failure (to be successful, you must face failure)

কথাগুলো আমার নয়। ঈশ্বরের! হ্যাঁ, কদিন সময় নিয়ে চেতান ভাগাতের One night @ the call center পড়ছিলাম। কল সেন্টারের ছয় কর্মী যখন চরম বিপদের মুহুর্তে জীবন-মৃত্যুর দোলাচরে দুলছিলো ঠিক তখন ঈশ্বর ফোন করে তাদের এ কথাগুলো বলেন যা পরবর্তীতে তাদের সম্পূর্ণ জীবনযাত্রা ও জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দেয়। সিরিয়াস কথা শেষ। এবার একটু মজার কথা বলি। কল সেন্টারের গল্প পড়তে পড়তে এক নিকটাত্মীয় শেয়ার করা অভিজ্ঞতার কথা বার বার মনে করে হাসছিলাম। গল্পটা এমন ছিলোঃ
উনি একটা মোবাইল কোম্পানীর কল সেন্টারে রাতের শিফটে ডিউটিতে ছিলেন। তো রাত বারোটার কিছুক্ষণ পর একটা কল আসলো। কলার সম্ভবত নোয়াখালী অঞ্চলের ছিলেন, আঞ্চলিক ভাষাতেই বললেন তার ফোনে বিভিন্ন সমস্যার কথা। যতটুকু বোঝা গেল লোকটার মোবাইল সম্পর্কিত জ্ঞান খুবই কম।
তো আমার নিকটাত্মীয় বললেন যে, স্যার আপনি তো অমুক অফার ব্যবহার করছেন। আপনার ব্যালেন্স এতো টাকা। আপনি যদি তমুক অফারে যেতে চান তো আপনাকে আরো এতো টাকা রিচার্জ করতে হবে।
লোকটা ওপ্রান্ত থেকে বললেন, আইচ্ছা ভাই.. আপনে কেম্নে জানেন আঁই (আমি) কি অফারে আছি। কত টেয়া (টাকা) আছে আঁর (আমার) মোবাইলে? বলেন তো আমারে..
রসিক আত্মীয়ের উত্তর, আমি সব দেখতে পাই স্যার। আপনার কি আর কোন তথ্য জানার আছে?

নোয়াখালীর লোকটির তৎক্ষণাত চিৎকার, “ও বউ, তাতাই লাইট বন্ধ কর.. হে বেডা বলে বেক কিছু দেখের (ও বৌ, তাড়াতাড়ি লাইট off করো.. ওই লোক নাকি আমাদের সব কিছু দেখতে পাচ্ছে)!”

Friday, 9 January 2015

অনিচ্ছুক ইচ্ছা

তারপরেও আমরা বইসা থাকি
না ঠিক বইসা না,
খাঁড়াইয়া কাউয়ার মতো 'কা কা' ডাকি
কেউ কেউ কয় উইড়া যা কালা পাখি
আর কেউ কয় আর তো মাত্র কিছুক্ষণ বাকী
সূর্যডা উডুক, দিনের শুরুটা না দেইখা-ই যাবি?!


তারপরেও দুইজন পাশাপাশি বাইসা
মনের মতো কইরা কাঁটাতার আঁকি
আমি কই তুমি উড়ো, সে কয় 'না তুমি'
দুইজন দুইজনেরে ছাইড়ে চাই
কিন্তু, ছাইড়া ছাইড়াও না ছাড়ি!


৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪
ফেনী, বাংলাদেশ।