বছরের অন্য সময়ের তুলনায় জানুয়ারীতে সবসময়ই অবসরটা বেশী থাকে। এ অবসরে কিছু চমৎকার বই পড়েছি। নিচে সেগুলো নিয়েই লিখছি।
Shyam Mehra ও কল সেন্টারে তার ৫ কলিগকে নিয়ে ঘটে যাওয়া একটি রাতের ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস। যেখানে তাদের ফোন করে স্বয়ং ঈশ্বর! বরাবরের মতোই চেতন ভাগাত তার লেখা উত্তম পুরুষ বা ফার্স্ট পার্সনে লিখেছেন আর সব গল্পের মতই এ গল্পও যুবসমাজকে প্রাধান্য দিয়ে (এ পর্যন্ত প্রত্যেক গল্পই young age-এর ছেলে-মেয়েদের নিয়েই লিখেছেন!)।
রাতের শিফটে কল সেন্টারে কাজ শুরুর আগ থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক ঘন্টার বর্ণনা আর পাশাপাশি Shayam এর সাথে তার এক্স-গার্লফ্রেন্ড ও বর্তমান কলিগ Priyanka-র স্মৃতিচারণ খুব সুন্দরভাবে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন। আমার ধারণা দুটো কারণে চেতন ভাগাতের লেখা পাঠক এতো পছন্দ করে। এক, অতীতের ঘটনাগুলো সুনিপুণভাবে লেখনীতে তুলে ধরা আর দুই, চমৎকার সেন্স অব হিউমর।
রাইফেল, রোটি, আওরাত - আনোয়ার পাশা
অনেকদিন ধরে পড়বো পড়বো করে পড়া হয়নি বইটি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর তৎসংলগ্ন এলাকাগুলোর একটা চিত্র এ বইয়ে লেখক তুলে ধরেছেন। লেখক আনোয়ার পাশাকে নিয়ে আলাদা করে বলতে হয় যিনি ছিলেন মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং পাশাপাশি একজন লেখক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন এবং রণাঙ্গণ থেকে এই বিখ্যাত উপন্যাসটি লিখেন। লেখক আনোয়ার পাশা আল বদরদের হাতে ১৪ ডিসেম্বর অপহৃত হয়ে পরে নিহত হন। তবে থেকে গেছে তার কালজয়ী উপন্যাসটি। খুব সম্ভবত একাত্তরের রণাঙ্গণ থেকে লেখা একমাত্র উপন্যাস এটি।
এ উপন্যাসের নায়কও লেখকের মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তবে ইংরেজী বিভাগের। নাম তার সুদীপ্ত শাহিন। অফিসিয়াল নাম নয়, পাকিস্থান আমলে এ নাম হিন্দুয়ানি বলে বিবেচিত হতো বলে এফিডেটিভ করে অন্য নামে শিক্ষকতা করতো। উপন্যাসের শুরুতেই ২৫শে মার্চের কালরাতে গণহত্যার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকাগুলোতে বসবাসকারীদের করুণ পরিণতি বর্ণনায় আসে। সত্যি বলতে কি, শিক্ষকদের বাসায়-সিড়িতে লাশ আর রক্তের বর্ণনা, পাক হানাদাররা ছাত্রদের গুলি করে মেরে ফেলে যাওয়ার পরের বর্ণনাগুলো এত বছর পরে পড়েও আমার গায়ের রোম শিউরে উঠেছে। জামাত আর নেজামে ইসলামীর কর্মীদের দালালীর চিত্র আর বিহারীদের মারমুখী আচরণও গল্পের মধ্যে তুলে ধরেছেন লেখক। যুদ্ধের শুরুতে কোণাঠাসা দুটো পরিবার আশ্রয়ের খোঁজে ঢাকা শহরে এদিক-সেদিক করে বিভিন্ন মানুষের বাসা বাড়ীতে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনা হৃদয়ে দাগ কাটার মতো করেই বর্ণনা করেছেন লেখক। আগ্রহী পাঠকরা এই বইয়ে চড়ে একাত্তরের টাইম লাইনে ঘুরে আসতে পারেন।
The 3 mistakes of my life by Chetan Bhagat
ব্যবসা, ক্রিকেট আর ধর্ম - এ তিনটি জিনিসকে নিয়ে বেড়ে ওঠা তিন যুবক বন্ধুর গল্প The 3 mistakes of my life. বরাবরের মতই চেতন ভাগাত একজনকে বেছে নিয়েছেন ঘটনার বর্ণনা করতে। লেখক IIM আহমেদাবাদে পড়ার সুবাদে গুজরাটে থেকেছেন, তাই গুজরাটিদের রক্তে মিশে থাকা ব্যবসা আর কিছু হিন্দু মৌলবাদী ধর্মের প্রতি অন্ধত্বটাকেও তুলে ধরেছেন। গল্পের এক পর্যায়ে ২০০১ সালে গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার চিত্রটাও তুলে ধরেছেন বেশ নিপুণভাবে যেখানে গল্পের একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মৃত্যু হয়।
গোবিন্দ এবং তার দুই বন্ধু ইশান্ত ও অমি। গোবিন্দ অংকে খুবই ভালো, পাবলিক পরীক্ষায় গণিতে রেকর্ড পরিমাণ মার্কস্ তুলে এলাকায় বিখ্যাত হয়েছে। পিতা পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়ার পর মায়ের সাথে সংসার সামলাচ্ছে টিউশন করে। তার মা পিঠা বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ডেলিভারী দিয়ে দু'জনের পরিবারের আয় রোজগার করছে। ইশান্ত মোটামুটি অবস্থা সম্পন্ন, তবে পিতার ইচ্ছেমত মিলেটারীতে চাকরী করা হয়নি তার। কিশোর বয়সে জেলা টীমে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়ে বেশ নামডাক হয়েছে। আর অমি মন্দিরের সেবকের ছেলে। সে গাধা টাইপের এবং ধর্মের প্রতি ব্যাপক দুর্বলতা রয়েছে তার। তিনবন্ধু মিলে ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যবসা শুরু করে আর সে অনুযায়ী গল্প এগুতে থাকে। গল্পের শুরুটা হয় গোবিন্দর ইমেইল দিয়ে। আত্মহত্যার পূ্র্বে সে লেখক চেতন ভাগাতকে ইমেইল করে, আর সে ইমেইলের সূত্র ধরেই সব কিছু ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে থাকে। চেতনের অন্যতম সেরা উপন্যাস এটি। হতাশাবাদীরা অনুপ্রেরনা খুঁজে পেতে এ বইটা অবশ্যই পড়তে পারেন। :)
সাকিব আল হাসানঃ আপন চোখে ভিন্ন চোখে - দেবব্রত মুখপাধ্যায়
লেখক বা গদ্যকার দেবব্রত মুখপাধ্যায়ের লেখার জাদু নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। পেশাগত জীবনে সাংবাদিক (মূলত ক্রীড়া সাংবাদিক) দেবব্রত দা ফেসবুক কমিউনিটি ও ব্লগ জগতে বেশ বিখ্যাত একটি নাম। আমাদের দেশের সেরা খেলোয়াড়টিকে নিয়ে এই প্রথম কোন বই লেখা হলো, আর সেটা করলেন সাংবাদিক দেবব্রত দা। এখানে লেখক না বলে সাংবাদিক বলছি এ কারণেই যে, বইটিতে মূলত সাকিব সম্পর্কে লিখেছেন বা ইন্টারভিউ দিয়েছেন দেশের ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গণের বিখ্যাত খেলোয়াড়, কোচ আর সাংবাদিকরা। এত মানুষের ইন্টারভিউ জোগাড় করে এক করতে দেবব্রত দাকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে তা অবশ্য আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাকিব শুধু বাংলাদেশের না, বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু এই সাকিব একসময় তো আজকের এই সাকিব ছিলেন না, ছিলেন ফয়সাল। কিন্তু ওই ফয়সাল কিভাবে আজকের এই সাকিব হয়ে উঠলেন তা জানতে অবশ্যই বইটা পড়া উচিত। সাকিবের মা, বাবা, বোন, ছোটবেলার বন্ধু, স্ত্রী আর কোচ থেকে শুরু করে বর্তমানের সহখেলোয়াড় - সবাই সাকিব সম্পর্কে বলেছেন। সত্যি বলতে সাকিব সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য জানতে পেরেছি বইটা পড়ে। তারকা সাকিবের পেছনে একজন পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী ক্রিকেট শ্রমিককেও স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছি। একটা মানুষ এত তারকাখ্যাতি পাবার পরও কিভাবে তার মূল ফোকাসটা সেই ছোটবেলা থেকে আজ অবদি ধরে রেখেছে তা-ও জেনেছি এ বই পড়ে।
যারা এদেশে থেকে সাধারণের কাতার থেকে অসাধারণের কাতারে যেতে চায় তাদের জন্য বোধকরি 'মাস্ট রিড' বই এটি।
2 States by Chetan Bhagat
অনেকগুলো রাজ্য নিয়ে ভারত রাষ্ট্র গঠিত হলেও রাজ্যগুলোর মানুষরা মানসিক আর সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে আজও তারা একটি একক জনগোষ্ঠী হয়ে উঠতে পারেনি। সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে নিজের গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে হিমশিম খাওয়া লেখক চেতন ভাগাত একেবারে নিজের জীবনের কাহিনী নিয়ে কলম ধরেছেন পাঞ্জাবী আর তামিল জনগোষ্ঠী তথা নর্থ আর সাউথ ইন্ডিয়ান সমাজের অসামাঞ্জস্ব্যতাগুলো গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরতে।
IIM-A তে পড়তে গিয়ে পাঞ্জাবী বংশদ্ভূত দিল্লীর অধিবাসী কৃশের সাথে পরিচয় তামিল নাড়ুর অনন্যার সাথে। সেখানেই প্রেম, দুই বছর একসাথে পড়াশোনা তারপর দুজনের দু্টো ব্যাংকে চাকরী। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও পারিবারিক অপছন্দের কারণে কেউই কাউকে বিয়ে করতে পারছিলেন না আর দুজনই পরিবারের অসম্মতিতে পালিয়ে বিয়ে করার বিরোধী। যাই হোক, সাংস্কৃতিক দ্বন্দের ইতি টেনে তারা কিভাবে কাছে এসেছিলেন আর কতো ঝড় এর মাঝে বয়ে গেছে তা জানতে অবশ্যই বইটা পড়তে পারেন। একই রাষ্ট্রে থেকেও কখন দুটো পরিবারের কাছে রাষ্ট্রের চেয়ে নিজ রাজ্য কেনো বড় হয়ে গিয়েছিলো তা বুঝতে এ উপন্যাস একটা ভালো অপশন। আট-দশটা লুতুপুতু প্রেমের কাহিনী নয়, বলা যায় সলিড প্রেমের কাহিনী এই 2 States। তবে এর ফাঁকে বলে রাখি, এই উপন্যাসকে কেন্দ্র করে তৈরী করা বলিউডের মুভী 2 States দেখে আমি যারপরনাই হতাশ হয়েছি। মুভী দেখে কেউ এই উপন্যাসকে বিচার করতে গেলে লেখকের প্রতি চরম অবিচার হয়ে যাবে।
এগুলো ছাড়াও জানুয়ারীতে আরো কিছু বই পড়তে ধরে আর শেষ করে ওঠা হয়নি। এর মাঝে চেতন ভাগাতের কলাম সমগ্র What Young India Wants আর পাওলো কোয়েলহো'র The Alchemist অসমাপ্ত পড়া অবস্থায় রয়েছে। ধন্যবাদ। :)
Shyam Mehra ও কল সেন্টারে তার ৫ কলিগকে নিয়ে ঘটে যাওয়া একটি রাতের ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস। যেখানে তাদের ফোন করে স্বয়ং ঈশ্বর! বরাবরের মতোই চেতন ভাগাত তার লেখা উত্তম পুরুষ বা ফার্স্ট পার্সনে লিখেছেন আর সব গল্পের মতই এ গল্পও যুবসমাজকে প্রাধান্য দিয়ে (এ পর্যন্ত প্রত্যেক গল্পই young age-এর ছেলে-মেয়েদের নিয়েই লিখেছেন!)।
রাতের শিফটে কল সেন্টারে কাজ শুরুর আগ থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক ঘন্টার বর্ণনা আর পাশাপাশি Shayam এর সাথে তার এক্স-গার্লফ্রেন্ড ও বর্তমান কলিগ Priyanka-র স্মৃতিচারণ খুব সুন্দরভাবে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন। আমার ধারণা দুটো কারণে চেতন ভাগাতের লেখা পাঠক এতো পছন্দ করে। এক, অতীতের ঘটনাগুলো সুনিপুণভাবে লেখনীতে তুলে ধরা আর দুই, চমৎকার সেন্স অব হিউমর।
রাইফেল, রোটি, আওরাত - আনোয়ার পাশা
অনেকদিন ধরে পড়বো পড়বো করে পড়া হয়নি বইটি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর তৎসংলগ্ন এলাকাগুলোর একটা চিত্র এ বইয়ে লেখক তুলে ধরেছেন। লেখক আনোয়ার পাশাকে নিয়ে আলাদা করে বলতে হয় যিনি ছিলেন মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং পাশাপাশি একজন লেখক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন এবং রণাঙ্গণ থেকে এই বিখ্যাত উপন্যাসটি লিখেন। লেখক আনোয়ার পাশা আল বদরদের হাতে ১৪ ডিসেম্বর অপহৃত হয়ে পরে নিহত হন। তবে থেকে গেছে তার কালজয়ী উপন্যাসটি। খুব সম্ভবত একাত্তরের রণাঙ্গণ থেকে লেখা একমাত্র উপন্যাস এটি।
এ উপন্যাসের নায়কও লেখকের মতোই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, তবে ইংরেজী বিভাগের। নাম তার সুদীপ্ত শাহিন। অফিসিয়াল নাম নয়, পাকিস্থান আমলে এ নাম হিন্দুয়ানি বলে বিবেচিত হতো বলে এফিডেটিভ করে অন্য নামে শিক্ষকতা করতো। উপন্যাসের শুরুতেই ২৫শে মার্চের কালরাতে গণহত্যার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকাগুলোতে বসবাসকারীদের করুণ পরিণতি বর্ণনায় আসে। সত্যি বলতে কি, শিক্ষকদের বাসায়-সিড়িতে লাশ আর রক্তের বর্ণনা, পাক হানাদাররা ছাত্রদের গুলি করে মেরে ফেলে যাওয়ার পরের বর্ণনাগুলো এত বছর পরে পড়েও আমার গায়ের রোম শিউরে উঠেছে। জামাত আর নেজামে ইসলামীর কর্মীদের দালালীর চিত্র আর বিহারীদের মারমুখী আচরণও গল্পের মধ্যে তুলে ধরেছেন লেখক। যুদ্ধের শুরুতে কোণাঠাসা দুটো পরিবার আশ্রয়ের খোঁজে ঢাকা শহরে এদিক-সেদিক করে বিভিন্ন মানুষের বাসা বাড়ীতে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনা হৃদয়ে দাগ কাটার মতো করেই বর্ণনা করেছেন লেখক। আগ্রহী পাঠকরা এই বইয়ে চড়ে একাত্তরের টাইম লাইনে ঘুরে আসতে পারেন।
The 3 mistakes of my life by Chetan Bhagat
ব্যবসা, ক্রিকেট আর ধর্ম - এ তিনটি জিনিসকে নিয়ে বেড়ে ওঠা তিন যুবক বন্ধুর গল্প The 3 mistakes of my life. বরাবরের মতই চেতন ভাগাত একজনকে বেছে নিয়েছেন ঘটনার বর্ণনা করতে। লেখক IIM আহমেদাবাদে পড়ার সুবাদে গুজরাটে থেকেছেন, তাই গুজরাটিদের রক্তে মিশে থাকা ব্যবসা আর কিছু হিন্দু মৌলবাদী ধর্মের প্রতি অন্ধত্বটাকেও তুলে ধরেছেন। গল্পের এক পর্যায়ে ২০০১ সালে গুজরাটে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার চিত্রটাও তুলে ধরেছেন বেশ নিপুণভাবে যেখানে গল্পের একটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মৃত্যু হয়।
গোবিন্দ এবং তার দুই বন্ধু ইশান্ত ও অমি। গোবিন্দ অংকে খুবই ভালো, পাবলিক পরীক্ষায় গণিতে রেকর্ড পরিমাণ মার্কস্ তুলে এলাকায় বিখ্যাত হয়েছে। পিতা পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়ার পর মায়ের সাথে সংসার সামলাচ্ছে টিউশন করে। তার মা পিঠা বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ডেলিভারী দিয়ে দু'জনের পরিবারের আয় রোজগার করছে। ইশান্ত মোটামুটি অবস্থা সম্পন্ন, তবে পিতার ইচ্ছেমত মিলেটারীতে চাকরী করা হয়নি তার। কিশোর বয়সে জেলা টীমে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়ে বেশ নামডাক হয়েছে। আর অমি মন্দিরের সেবকের ছেলে। সে গাধা টাইপের এবং ধর্মের প্রতি ব্যাপক দুর্বলতা রয়েছে তার। তিনবন্ধু মিলে ক্রিকেট সরঞ্জামের ব্যবসা শুরু করে আর সে অনুযায়ী গল্প এগুতে থাকে। গল্পের শুরুটা হয় গোবিন্দর ইমেইল দিয়ে। আত্মহত্যার পূ্র্বে সে লেখক চেতন ভাগাতকে ইমেইল করে, আর সে ইমেইলের সূত্র ধরেই সব কিছু ধীরে ধীরে পরিষ্কার হতে থাকে। চেতনের অন্যতম সেরা উপন্যাস এটি। হতাশাবাদীরা অনুপ্রেরনা খুঁজে পেতে এ বইটা অবশ্যই পড়তে পারেন। :)
সাকিব আল হাসানঃ আপন চোখে ভিন্ন চোখে - দেবব্রত মুখপাধ্যায়
লেখক বা গদ্যকার দেবব্রত মুখপাধ্যায়ের লেখার জাদু নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। পেশাগত জীবনে সাংবাদিক (মূলত ক্রীড়া সাংবাদিক) দেবব্রত দা ফেসবুক কমিউনিটি ও ব্লগ জগতে বেশ বিখ্যাত একটি নাম। আমাদের দেশের সেরা খেলোয়াড়টিকে নিয়ে এই প্রথম কোন বই লেখা হলো, আর সেটা করলেন সাংবাদিক দেবব্রত দা। এখানে লেখক না বলে সাংবাদিক বলছি এ কারণেই যে, বইটিতে মূলত সাকিব সম্পর্কে লিখেছেন বা ইন্টারভিউ দিয়েছেন দেশের ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাঙ্গণের বিখ্যাত খেলোয়াড়, কোচ আর সাংবাদিকরা। এত মানুষের ইন্টারভিউ জোগাড় করে এক করতে দেবব্রত দাকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে তা অবশ্য আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাকিব শুধু বাংলাদেশের না, বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু এই সাকিব একসময় তো আজকের এই সাকিব ছিলেন না, ছিলেন ফয়সাল। কিন্তু ওই ফয়সাল কিভাবে আজকের এই সাকিব হয়ে উঠলেন তা জানতে অবশ্যই বইটা পড়া উচিত। সাকিবের মা, বাবা, বোন, ছোটবেলার বন্ধু, স্ত্রী আর কোচ থেকে শুরু করে বর্তমানের সহখেলোয়াড় - সবাই সাকিব সম্পর্কে বলেছেন। সত্যি বলতে সাকিব সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য জানতে পেরেছি বইটা পড়ে। তারকা সাকিবের পেছনে একজন পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী ক্রিকেট শ্রমিককেও স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছি। একটা মানুষ এত তারকাখ্যাতি পাবার পরও কিভাবে তার মূল ফোকাসটা সেই ছোটবেলা থেকে আজ অবদি ধরে রেখেছে তা-ও জেনেছি এ বই পড়ে।
যারা এদেশে থেকে সাধারণের কাতার থেকে অসাধারণের কাতারে যেতে চায় তাদের জন্য বোধকরি 'মাস্ট রিড' বই এটি।
2 States by Chetan Bhagat
অনেকগুলো রাজ্য নিয়ে ভারত রাষ্ট্র গঠিত হলেও রাজ্যগুলোর মানুষরা মানসিক আর সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে আজও তারা একটি একক জনগোষ্ঠী হয়ে উঠতে পারেনি। সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে নিজের গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে হিমশিম খাওয়া লেখক চেতন ভাগাত একেবারে নিজের জীবনের কাহিনী নিয়ে কলম ধরেছেন পাঞ্জাবী আর তামিল জনগোষ্ঠী তথা নর্থ আর সাউথ ইন্ডিয়ান সমাজের অসামাঞ্জস্ব্যতাগুলো গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরতে।
IIM-A তে পড়তে গিয়ে পাঞ্জাবী বংশদ্ভূত দিল্লীর অধিবাসী কৃশের সাথে পরিচয় তামিল নাড়ুর অনন্যার সাথে। সেখানেই প্রেম, দুই বছর একসাথে পড়াশোনা তারপর দুজনের দু্টো ব্যাংকে চাকরী। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও পারিবারিক অপছন্দের কারণে কেউই কাউকে বিয়ে করতে পারছিলেন না আর দুজনই পরিবারের অসম্মতিতে পালিয়ে বিয়ে করার বিরোধী। যাই হোক, সাংস্কৃতিক দ্বন্দের ইতি টেনে তারা কিভাবে কাছে এসেছিলেন আর কতো ঝড় এর মাঝে বয়ে গেছে তা জানতে অবশ্যই বইটা পড়তে পারেন। একই রাষ্ট্রে থেকেও কখন দুটো পরিবারের কাছে রাষ্ট্রের চেয়ে নিজ রাজ্য কেনো বড় হয়ে গিয়েছিলো তা বুঝতে এ উপন্যাস একটা ভালো অপশন। আট-দশটা লুতুপুতু প্রেমের কাহিনী নয়, বলা যায় সলিড প্রেমের কাহিনী এই 2 States। তবে এর ফাঁকে বলে রাখি, এই উপন্যাসকে কেন্দ্র করে তৈরী করা বলিউডের মুভী 2 States দেখে আমি যারপরনাই হতাশ হয়েছি। মুভী দেখে কেউ এই উপন্যাসকে বিচার করতে গেলে লেখকের প্রতি চরম অবিচার হয়ে যাবে।
এগুলো ছাড়াও জানুয়ারীতে আরো কিছু বই পড়তে ধরে আর শেষ করে ওঠা হয়নি। এর মাঝে চেতন ভাগাতের কলাম সমগ্র What Young India Wants আর পাওলো কোয়েলহো'র The Alchemist অসমাপ্ত পড়া অবস্থায় রয়েছে। ধন্যবাদ। :)